কোদাল হাতে তাঁতশিল্পীরা। নিজস্ব চিত্র
সশব্দে কোদালের কোপ পড়ছে মাটিতে। তারই মাঝে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে নিতাই বসাকের। পেশায় তাঁতশিল্পীর অনভ্যস্ত হাতে মাটি কাটার কাজ শুরু করেছেন বাধ্য হয়ে। জীবন ছন্দ হারিয়েছে করোনা, লকডাউন ও হালের কড়াকড়িতে। ফুলিয়া এলাকার বহু তাঁতশিল্পী পেটের দায়ে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন এবং ১০০ দিনের কাজে আয়ের রাস্তা খুঁজছেন। গত বছর থেকে পঞ্চায়েতে আবেদন করে অনেকে জব কার্ড পেয়ে কাজ শুরু করেছেন। ফুলিয়ার তাঁতশিল্পের খ্যাতি ছিল রাজ্যের নানা প্রান্ত, এমনকি বিদেশেও। সেই শিল্পে আঘাত এসেছে গত বছর থেকে। অতিমারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল তাঁত। এখনও ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। বাইরেও কাপড় পাঠানোর ক্ষেত্রে পরিবহনের সমস্যা রয়েছে। ঘরেই জমছে উৎপাদিত শাড়ি। এই অবস্থায় মাকু ছেড়ে হাতে কোদাল তুলে নিয়েছেন অনেকে।
ফুলিয়া টাউনশিপ পঞ্চায়েত এলাকায় অনেক তাতশিল্পী এখন জব কার্ড করিয়ে ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদেরই এক জন আস্তিক রায় বলছেন, “১৯৮১ সাল থেকে তাঁত বুনছি। আমার পরিবার এই শিল্পের উপরেই নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এখন সেখানে আয় নেই। কাপড়ের বিক্রি নেই। ১০০ দিনের কাজের জন্য আবেদন করে সুযোগ পেয়েছি। সেটাই করে যাচ্ছি।”
নিমাই বসাক বলেন, “১৩ বছর বয়স থেকে তাঁত বুনি। গত বছর থেকে কাপড়ের বিক্রি নেই। মহাজনেরাও কাপড় সে ভাবে নিতে পারছেন না। তাই ১০০ দিনের কাজ করছি।” এই বছরেই ১০০ দিনের কাজে যোগ দিয়েছেন রানি শীল। বলেন, “আমার বাড়ির তাঁত এখন বন্ধ। ১০০ দিনের কাজ এখন আমাদের মতো মানুষদের বাঁচিয়ে রেখেছে।”
ফুলিয়া টাউনশিপ পঞ্চায়েতের প্রধান উৎপল বসাক বলেন, “গত বছর থেকেই তাঁতশিল্পীদের অনেকে আমাদের কাছে আবেদন করেছেন জব কার্ডের জন্য। তাঁদের কার্ড দেওয়া হয়েছে। অনেকেই কাজ শুরু করেছেন।”