প্রতীকী ছবি।
তিন মাসের জন্য উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল বাতিল করেছে তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস। আর বেড়ানোর মরসুমে সেই ট্রেন বাতিলের জন্য অধিকাংশ পর্যটক ডিসেম্বরে তাঁদের উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করছেন বাধ্য হয়েই। আর সেই হিড়িকে ফের লোকসানের আশঙ্কায় জেলার পর্যটন সংস্থাগুলি। কোভিড পরিস্থিতির কারণে গত বছর থেকে পর্যটন ব্যবসায় মন্দা চলছে তাঁদের। এ বছর পুজোর সময় উত্তরাখণ্ডের ভয়াবহ দুর্যোগেও ব্যবসায় লক্ষ্মীলাভ আটকানো যায়নি উত্তরবঙ্গের কাছাকাছি জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার চাহিদা থাকায়। কিন্তু দূরযাত্রার একমাত্র ট্রেন বাতিল হওয়ায় এ বার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা।
বহরমপুরের খাগড়াঘাট স্টেশন থেকে সোজা জলপাইগুড়ি পৌঁছনো যায় বলে জেলাবাসীর কাছে তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসের চাহিদা সব থেকে বেশি থাকে। এ ছাড়া শিয়ালদা থেকে নিউ আলিপুরদুয়ার পৌঁছনোর জন্য জেলায় দ্বিতীয় কোনও ট্রেন নেই। গুয়াহাটি পর্যন্ত যাওয়ার জন্য কামরূপ এক্সপ্রেস থাকলেও তাতে সংরক্ষিত টিকিট পাওয়া অসুবিধাজনক। তাহলে উত্তরবঙ্গ যেতে হলে অন্য ট্রেনে হাওড়া পৌঁছে ট্রেন বদল করে গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। কোভিড কালে সেইসব সাধারণ ট্রেনে চেপে বেড়াতে গিয়ে স্বাস্থের কথা চিন্তা করে সেগুলো এড়িয়েই যাচ্ছেন তাঁরা। উল্টে জনপ্রিয় এই ট্রেন বাতিলের ফলে অনেকেই আর যেতে চাইছেন না সেখানে।
অথচ অগ্রিম টাকা দিয়ে হয় কোনও পর্যটন সংস্থার মাধ্যমে নয়তো নিজেরা উত্তরবঙ্গে সফর সূচি মতো সেখানকার হোটেল বুক করে রেখেছেন প্রায় সকলেই। কথা হয়েছে সেখানকার গাড়ির চালকের সঙ্গেও। আর সেসবের জন্য ন্যূনতম ছয় থেকে দশ হাজার টাকা ইতিমধ্যে খরচও করে ফেলেছেন তাঁরা। তাঁদের এখন চিন্তা সেই টাকা তাঁরা ফেরত পাবেন কি করে? অগ্রিম বুকিংয়ের টাকা ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কায় কেউ কেউ কলকাতা হয়েও উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছেন। যদিও সেই সংখ্যাটা কম বলেই দাবি জেলার পর্যটন সংস্থাগুলোর। তবে ব্যক্তিগত ভাবে যাঁরা হোটেল বুক করেছেন তাদের থেকেও ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত যাঁরা নিয়েছিলেন পুরো টাকা ফেরত পাবেন কিনা তাই নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা। অভিযোগ, তাঁরা টাকা ফেরতের জন্য চাপ বাড়াচ্ছেন সংস্থার উপরে।
মুর্শিদাবাদ ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবজ্যোতি ভৌমিক বলেন “মরশুমি সময়ে কোনও হোটেলই এখন চাইছে না অগ্রিম বুকিং বাতিল করতে। এতদিন পরে তাঁরাও রোজগারের সুযোগ পেয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই একটি ট্রেন বাতিল বলে তাঁরা সেই সুযোগ পর্যটককে দিতে রাজি নয়। আবার আমরাও চাই না পর্যটকের টাকা অপচয় হোক।” সেক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা টাকায় পরবর্তী কোনও সময়ে তা ব্যায় করার প্রস্তাবও দিচ্ছেন তাঁরা। সেদিকে প্রস্তাবে অবশ্য তেমন সাড়া পাননি বলেই জানান শিবজ্যোতি।
তবে শুধু পর্যটকেরাই নন। নানা কাজে বিশেষ করে ব্যবসার কাজে জেলা অনেক মানুষকেই নিয়মিত উত্তরবঙ্গ যেতে হয়। তাঁদের জন্যও এই ট্রেন বন্ধ থাকা বড় দুঃসংবাদ।