Fraudulent

Fake Lawyer: চাঁদুর কীর্তি শুনে সনাতনের পাড়া অবাক

ভুয়ো পরিচয়ে ‘প্রতারণা’ করায় যাঁকে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেফতার করেছে।

Advertisement
বিদ্যুৎ মৈত্র
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২১ ০৬:৫৫
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

প্রায় তিরিশ বছর আগে বহরমপুর ছেড়ে কলকাতা চলে গিয়েছিলেন আইনজীবী সনাতন রায়চৌধুরী। ভুয়ো পরিচয়ে ‘প্রতারণা’ করায় যাঁকে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেফতার করেছে। খুড়তুতো দুই ভাই সুমন ও সুজয় রায়চৌধুরী তো বটেই পাড়ার “চাঁদু”র এহেন কাণ্ড খাগড়ার দৈহাট্টা রোডের বাসিন্দাদের কারও বিশ্বাস করতে মন চাইছে না। সন্দেহের আড়ালে সকলেরই অস্ফুট জিজ্ঞাসা “ষড়যন্ত্র নয়তো?”

তবে রাজ্য জুড়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের পর তাদের ‘চাঁদু’ও যে নিজের ছদ্ম পরিচয়ে নীল বাতি চেপে পাড়ায় আসতে পারে না এমন সন্দেহ পুরোপুরি মন থেকে ফেলেও দিতে পারছেন না তাঁরা। তাই প্রকাশ্যে মত দিতেও নারাজ চাঁদুর জীবনের আঠারো বসন্ত একসাথে কাটানো সেই সব বন্ধু ও প্রতিবেশীরা। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় বহরমপুরের এই প্রাচীন ব্যস্ত জনপদ যেন বোবা হয়ে গিয়েছে। সকলের মুখেই কুলুপ।

Advertisement

১৯৮৭ সালে স্থানীয় গুরুদাস তারাসুন্দরী ইন্সটিটিউশন থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন সনাতন রায়চৌধুরী, যিনি রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি ও কলকাতা হাইকোর্টের স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল বলে নিজেকে পরিচয় দিতেন কলকাতায়। আর তার আড়ালে চালাতেন জমি-বাড়ি বিক্রির প্রতারণা চক্র। যা শুনে তাজ্জব ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরাও। ঘটনা শুনে তাঁরাই উৎসাহী হয়ে ধুলো ঝেড়ে বের করে আনলেন তাঁর মার্কশিট। হাতে লেখা রেজিস্ট্রি বুকে লেখা সরকারি কর্মী প্রয়াত সুশান্ত রায়চৌধুরীর একমাত্র পুত্র সনাতনের প্রাপ্ত নম্বর ৪৫৭। দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ। সর্বোচ্চ নম্বর ইতিহাসে, ৫৯। মাধ্যমিক পাশ করে সনাতন বহরমপুর কলেজের কর্মাস বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানালেন তাঁর খুড়তুতো ভাই সুমন রায়চৌধুরী।

সুমনের ছোটভাই সুজয় রায়চৌধুরী বলেন, “দাদা বিহার থেকে আইন পাশ করেছিলেন।” সনাতনের ‘দোস্ত’ বলে প্রতিবেশীরা পরিচয় দিলেও ওষুধ ব্যবসায়ী অরিন্দম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বললেন, “আমি এসব কিছুই জানি না। সনাতন আমার থেকে বছর দুয়েকের ছোট হবে বোধহয়। মাধ্যমিক পাশের পর আলাপ হয়েছিল খেলতে গিয়ে। তারপর যা হয় এই আর কি। বহুদিন কোনও যোগাযোগ নেই। শুনেছি কলকাতায় থাকতো। সেখানে আমি কোনও দিন যাইনি।”
অথচ চলতি বছর মার্চে নিজের কাকিমার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে খাগড়ায় তাঁর পৈত্রিক ভিটেতে এসে তাঁর বাড়িতেও সময় কাটিয়েছিলেন বলে জানান ওই পাড়ারই বাসিন্দারা। এক বন্ধ কারখানার শ্রমিক সুদীপকে নিজেদের বাড়ির এক অংশে চায়ের দোকান করে উপার্জনের রাস্তা করে দিয়েছেন রায়চৌধুরী ভাইরাই। সেবার এসে বাড়ির বাইরের সেই চায়ের দোকানে চিনি ছাড়া চা খেয়েছিলেন সনাতন হজমিগুলি মিশিয়ে, জানান ওই চা বিক্রেতা সুদীপ দাস। সুদীপ বলেন, “মার্চ মাসে সনাতন বাবুকে এই বাড়িতে প্রথম আসতে দেখি। আমার দোকানে সেই সময় চা খেয়েছিলেন। খুব কম কথা বলতেন। সেই সময় নীল বাতি লাগানো একটি গাড়ি দিন কয়েক এই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। পরে জেনেছি উনি উচ্চপদে চাকরি করেন।” বছর চারেক আগে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরি ছেড়ে এখন ব্যবসায়ী সুমন বলেন, “ও আসলে সার্কিট হাউসেই থাকতো।”

আর এক ভাই পুরকর্মী সুজয় বলেন, “যতদিন চাকরি পাইনি ততদিন আমি নিজে দাদার সঙ্গে অনেক জায়গায় ঘুরেছি। রাজ্য ও দিল্লির সিবিআই অফিসে গিয়েছি। সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছি শুনানি শুনতে। বহু মানুষ প্রত্যক্ষ অপ্রত্যক্ষভাবে তাঁর সহযোগিতা পেয়েছেন। কখনও সন্দেহ হয়নি ওর পরিচয় ভুয়ো বলে। এখানেও সার্কিট হাউসে থাকতো।” সুমন বলছেন “ বাড়ির বাইরে পা রাখতে লজ্জা করছে। এলাকার পরিচিত মানুষজনেরাও সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন। খারাপ লাগছে।” বহরমপুর থানায় তাঁর নামে অবশ্য কোনও অভিযোগ নেই।

আরও পড়ুন
Advertisement