প্রতীকী চিত্র।
এ বার স্ক্রাব টাইফাস পজ়িটিভ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক স্কুল ছাত্রের। নাম বাপন ঘোষ। বাজারসৌ হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি শক্তিপুর থানার তালডাঙা গ্রামে। শুক্রবার ওই ছাত্র মাঠে গিয়েছিল ঘাস কাটতে। সেখান হাতে জ্বালা করলে সে বাড়ি ফিরে আসে। রাতে বমি হয়। তাকে প্রথমে শক্তিপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রোগীর পরিবার বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে রবিবার গভীর রাতে তার মৃত্যু হয়। ওই ছাত্রের মৃত্যু শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ হিসাবে চিকিৎসক লিখেছেন, সেপটিক শক ইন এ পেসেন্ট অফ স্ক্রাব টাইফাস পজ়িটিভ। বেলডাঙা ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তরুণ বারুই জানান, "ওই রোগীকে চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়েছিল। তার পরিবার একটি বেসরকারি কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ স্ক্রাব টাইফাস পজেটিভ বলে মনে করা হচ্ছে।"
করোনা আবহে নিঃশব্দে জেলায় বাড়ছে স্ক্রাব টাইফাস আক্রান্তের সংখ্যা। সঙ্গে দোসর ম্যালেরিয়া। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, এখনও পর্যন্ত জেলায় প্রায় আটশো জনের রক্তের নমুনায় শ’দেড়েক রোগীর শরীরে মিলেছে স্ক্রাব টাইফাসের জীবাণু। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজিস্ট রঞ্জন বসুর পর্যবেক্ষণে, “গত বছরের তুলনায় স্ক্রাব টাইফাস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।” আর তা যথেষ্ট চিন্তার কারণ বলে মনে করেন ওই চিকিৎসক।
বছর দুয়েক আগে ২০১৯ এ তখনও করোনা মহামারির খোঁজ মেলেনি জেলায়, সেই সময় শীতের হাওয়ায় মানুষের মধ্যে কাঁপুনি ধরিয়েছিল স্ক্রাব টাইফাস। আর সেই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হয়েছিল বহরমপুর, নবগ্রাম, বেলডাঙার একাধিক মানুষের।
সে সময় জেলার একমাত্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্ক্রাব টাইফাসের জীবাণু শনাক্তকরণের কোনও কিট ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছিল। করোনা কালেও গতবছর এই রোগেরও জীবাণু মিলেছিল একাধিক জেলাবাসীর শরীরে। বয়স্কদের পাশাপাশি যাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও ছিল। এবারেও শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে এই রোগে। চিকিৎসাধীন একজন শিশু সংকটজনক অবস্থায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে বলে ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
সাধারণ একপ্রকার কীট দ্বারা আক্রান্তের পরেই রোগীর জ্বর আসে। তবে জ্বর হলেই যে করোনা বা স্ক্রাব টাইফাসেই সেই ব্যক্তি আক্রান্ত তেমন কোনও কথা না থাকলেও চুপচাপ বসে না থেকে সেই সময় চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলছেন রঞ্জন বসু। জ্বর, বমি, গায়ে হাত পায়ে ব্যথা প্রাথমিক ভাবে স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণ হিসাবে ধরা না হলেও জ্বর দু’সপ্তাহের বেশি থাকলে রক্ত পরীক্ষার কথা বলছেন অন্য চিকিৎসকরাও।
চিকিৎসক রঞ্জন বসু বলেন, “ মূলত মাইট নামক একপ্রকার কীটের কামড়ে এই রোগ হয়। কামড়ানো জায়গায় কালো রঙের ক্ষত তৈরি হয়, যা এই রোগের সন্দেহের অন্যতম লক্ষণ।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, স্ক্রাব টাইফাসের আগ্রাসনে জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল বেসরকারি হাসপাতালে জ্বরের চিকিৎসা করাতে এলে তাঁদের রক্ত পরীক্ষার নিদান দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।