Green Chilli

মাখেন আধ কেজি, দৈনিক চিবোন এক কেজি লঙ্কা! লঙ্কাকাণ্ডের নায়ক বলছেন, ‘আমি তো এমনি এমনি খাই’

শেখরের দাবি, গত চার দশক ধরে নিয়মিত এ ভাবেই লঙ্কা চিবিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মুখে, মাথায় লঙ্কাবাটা মাখলেও নাকি হয় উপকার। দৈনিক এক কেজি করে লঙ্কা খেয়ে থাকেন শেখর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:১৬
‘লঙ্কার রাজা’ শেখর শিকদার।

‘লঙ্কার রাজা’ শেখর শিকদার। — নিজস্ব চিত্র।

বয়স বাড়লেও কমবে না চোখের জ্যোতি। চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়ার তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না। শুধু দৈনিক মুখে মাখতে হবে ৫০০ গ্রাম আর খেতে হবে ন্যূনতম ১ কেজি। এতেই নাকি এড়ানো যাবে হৃদ্‌রোগ, স্নায়বিক সমস্যা। ‘সর্বগুণ সম্পন্ন মহৌষধি’র নাম কাঁচালঙ্কা! যিনি এই নিদান দিচ্ছেন তিনি গত ৪০ বছর ধরে নিজেকে সুস্থ রাখতে ‘লঙ্কৌষধি’ প্রয়োগ করে চলেছেন নিজের উপর। অনায়াস দক্ষতায় ৫০০ গ্রাম কাঁচালঙ্কা বাটা মুখে মেখে, জল ছাড়া চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারেন আরও এক কেজি কাঁচালঙ্কা। আশ্চর্য লঙ্কাকাণ্ডে শোরগোল পড়ে গিয়েছে নদিয়ায়।

Advertisement

সুকুমার রায় সেই কবেই লিখে গিয়েছিলেন, ‘গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা!’ নদিয়ায় এই কবিতাকেই সামান্য বদলে নিতে হল। নতুন পঙ‌্‌ক্তি— ঝালের আমি, ঝালের তুমি, ঝাল দিয়ে যায় চেনা! খুব ছোট থেকেই ঝাল লঙ্কার প্রতি ছেলের প্রবল আসক্তি, দাবি বৃদ্ধা মায়ের। লঙ্কা খাওয়ার প্রতিযোগিতায় তাঁকে টেক্কা দিতে পারলে নগদ ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার চ্যালেঞ্জও জানানো আছে নদিয়ার শেখর শিকদারের। অনেকেই তাঁকে ডাকেন লঙ্কার রাজা বলে। আর শেখরের এই কাণ্ড দেখতে প্রতি দিন ভিড় জমছে বাড়ির উঠোনে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, নদিয়ার রানাঘাট ২ ব্লকের আইসমালির বাসিন্দা শেখর প্রতি দিন নিয়ম করে কেজি কেজি লঙ্কা কেনেন। প্রথম দিকে সে ভাবে কেউ আশ্চর্য না হলেও, সময় বাড়তেই নানা প্রশ্ন উঁকি দেয় বিক্রেতাদের মনে। কৌতূহল নিরসনে পাল্টা প্রশ্ন করতে হদিস মেলে ‘লঙ্কাকাণ্ডে’র। শেখর বলছেন, ‘‘যখন দাম কম থাকে তখন বাটা লঙ্কা মুখে মেখে নিই। খেতে খেতে প্রায় কেজিখানেকও খেয়ে ফেলি। তবে দাম যখন বৃদ্ধি পায় সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোয় না।’’ ঝাল লাগে না? শুনেই শেখরের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ঝাল কই! আর লঙ্কার স্বাদ তো বেশ ভালই।’’ তাঁর নিদান, ‘‘নিয়মিত লঙ্কাবাটা মুখে মাখলে চেহারায় কোনও দিন বয়সের ছাপ পড়বে না। আর নিয়মিত কাঁচালঙ্কা চিবিয়ে খেলে অটুট থাকবে চোখের জ্যোতি।’’ শেখরের বৃদ্ধা মা বলেন, ‘‘তখন তো এত সব মেশিনপত্র ছিল না। অনেক বড় সংসার বাংলাদেশে। ঢেঁকিতে শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো করে বস্তায় বন্দি করে ঘরে রেখে দিয়েছিলাম। শেখর তখন বছর দু’য়েকের। হামাগুড়ি দিয়ে সেই বস্তার কাছে গিয়ে সব শুকনো লঙ্কা বার করে গায়ে মেখে বসেছিল। বাড়িতে তো কান্নাকাটি শুরু। সবাই মিলে দুধ, দই, ঘোল ঢেলে পরিষ্কার করা হল। আমরা কান্নাকাটি করছি আর ছেলে মুচকি মুচকি হাসছে! তার পর থেকেই একটা-দুটো করে লঙ্কা খায়। বড় হওয়ার পর থেকে চুরি করে খেত। এখন তো নিজে আনে, নিজেই খায়।’’

শেখরের প্রতিবেশী অমিয় ঢালি বলছেন, ‘‘শেখরের লঙ্কা মাখা আর লঙ্কা খাওয়ার নিত্যদিনের সাক্ষী আমরা। হয় ঐশ্বরিক, নয় অতি বৈজ্ঞানিক কোনও ক্ষমতা রয়েছে শেখরের। বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষা করে এই ক্ষমতার উৎস অনুসন্ধান দরকার। এমনটাও হতে পারে যে, বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কারের কোনও দরজা খুলে দেবেন শেখর!’’

আরও পড়ুন
Advertisement