Independence Day

সাহেবি ‘আঁচড়ে’ বিলম্বিত স্বাধীনতা, স্মৃতি মেনে ১৮ অগস্ট পালিত হয় নদিয়ার স্বাধীনতা দিবস

নদীয়ার যে অংশগুলি প্রথমে পাকিস্তানে পড়েছিল সেই সব অঞ্চলের মানুষ এখনও মনে করেন তাঁদের স্বাধীনতা দিবস ১৮ অগস্ট।

Advertisement
প্রণয় ঘোষ
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৩ ০০:০৫
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গঙ্গাবক্ষে বাইচ প্রতিযোগিতা।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গঙ্গাবক্ষে বাইচ প্রতিযোগিতা। —নিজস্ব চিত্র।

‘অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো’র একটি ঘোষণায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। প্রাক্‌স্বাধীনতার সন্ধ্যায় একটি বার্তায় হঠাৎই জানানো হয়, নদিয়া জেলার বেশ খানিকটা অংশ মানচিত্রে ‘পূর্ব পাকিস্তান’-এর অংশ বলে চিহ্নিত হয়েছে। র্যা্ডক্লিফ সাহেবের তৈরি করা মানচিত্রে একটি ভুল আঁচড়ে নদিয়ার বেশ কিছু জায়গায় প্রাক্‌স্বাধীনতা উৎসবের আনন্দ মুহূর্তে বদলে বদলে যায় বিষাদে। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির তৎপরতা আর বাংলার তৎকালীন নেতাদের প্রচেষ্টায় শেষমেশ প্রত্যাহার হয় সিদ্ধান্ত। প্রায় তিন দিন পর ১৭ অগস্ট বিকেলে নতুন বার্তায় ঘোষণা করা হয়, কৃষ্ণনগর ও রানাঘাটের ভারতে অন্তর্ভুক্তির কথা। সেই স্মৃতি মেনে আজও নদিয়ার রানাঘাট এবং শান্তিপুরের বেশ কিছু অংশে ১৮ অগস্ট ঘটা করে পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস।

Advertisement

১৯৪৭ সালের ৩০ জুন ভারতের গভর্নর জেনারেল স্যর র্যাসডক্লিফকে চেয়ারম্যান করে পাঁচ জনের ‘বাউন্ডারি কমিশন’ গঠিত হয়। ৩০ জুন থেকে ১৪ অগস্ট— ৪৫ দিন সাক্ষ্য গ্রহণ-সহ একাধিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ‘বাউন্ডারি কমিশন’ রিপোর্ট তৈরি করে। ১৯৪৭ সালের ১২ অগস্ট র্যািডক্লিফের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয় নতুন মানচিত্র। মানচিত্র অঙ্কন করার সময় সাহেবের এক আঁচড়ের ভুলে নদিয়ার কৃষ্ণনগর, শিবনিবাস, রানাঘাট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই ঘোষণার পরেই কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি দখলের চেষ্টা করে পাকিস্তানি ফৌজ। চারদিকে বিশৃঙ্খলা। ইংরেজদের কাছে নদিয়ার নিরাপত্তা চাইলেন রাজা সৌরিশচন্দ্র। ফোর্ট উইলিয়াম থেকে রাতারাতি সেনা মোতায়েন করা হয়। এর পর নাটকীয় ভাবে কাটে দু’দিন। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব, মহারানি জ্যোতির্ময়ী, মুর্শিদাবাদের ওয়াজেদ আলি মির্জা-সহ বিভিন্ন জনের পক্ষে সর্বভারতীয় স্তরে তৎপরতা তুঙ্গে ওঠে। শেষ পর্যন্ত মানচিত্রে বদল ঘটে। পিছিয়ে যায় র্যা ডক্লিফ লাইন। সমগ্র নদিয়া অন্তর্ভুক্ত হল ভারতের। কলকাতা থেকে দিল্লি— প্রশাসনিক স্তরে দীর্ঘ টালবাহানার পর ১৭ অগস্ট বিকেলে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ জারি হয়। বাতিল হয় আগের সব বিজ্ঞপ্তি। নদিয়াকে দ্বিখন্ডিত করে নবদ্বীপ ও কুষ্টিয়া জেলা গঠিত হয়। নবদ্বীপ জেলার অন্তর্ভুক্ত হয় কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট মহকুমা। স্বস্তির শ্বাস ফেলেন নদিয়ার মানুষ। ১৮ অগস্ট। নদিয়ায় ওড়ে তেরঙা জাতীয় পতাকা।

যে অংশগুলি প্রথমে পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়, সে সব অঞ্চলের মানুষ এখনও স্বাধীনতা দিবস মানেন ১৮ অগস্টকে। শিবনিবাস, রানাঘাট বা শান্তিপুরের মতো জায়গায় দিনটি যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। ‘নদিয়া জেলা ‘১৮ই আগস্ট কমিটি’র সম্পাদক অঞ্জন সুকুল বলেন, “অনেক লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিন দিনের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ১৮ আগস্ট ভারতভুক্ত হয় শিবনিবাস ও শান্তিপুরের বেশ কিছু অংশের। আমরা সেই দিনের স্মৃতি মনে রেখে আজও ১৮ অগস্টকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করি।”

শুক্রবার শান্তিপুরের ডাকঘর মোড়ে নেতাজি মূর্তির পাদদেশে বিশেষ অনুষ্ঠান, গঙ্গাবক্ষে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা, শিবনিবাসে পদযাত্রা ও একাধিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি পালিত হয়। নবতিপর রমণী বিশ্বাস বলেন, “আজও মনে আছে সেই স্মৃতি। পাকিস্তানের ফৌজ প্রায় দখল নিয়েছে গোটা এলাকা। বাবা মায়ের হাত ধরে আমরা তখন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পথে। হঠাৎ শুনলাম শিবনিবাস ভারতেই থাকছে। সে দিনের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।”

আরও পড়ুন
Advertisement