নসিপুরের আখড়ায় ঝুলন উৎসব। নিজস্ব চিত্র।
মোমবাতির আর চল তেমন নেই বললেই চলে। প্রতি বছর নশিপুর আখড়ার সান বাঁধানো দালানে শক্ত শেকল দিয়ে টাঙানো শতাব্দীর প্রাচীন ঝাড় গুলোয় জ্বলে উঠত বিভিন্ন রঙের বাল্ব। আলোর রোশনাইয়ে চোখ ধাঁধিয়ে যেত সকলের। আর রাখি পূর্ণিমার দিন তো কোনও কথাই নেই। মানুষের ভিড় আর সারারাত জুড়ে যাত্রাপালা। বড় নাট মন্দিরের এক প্রান্তে দোলনায় ঝুলছে কৃষ্ণ রাধা। অপর প্রান্তে দোলনায় ঝুলছেন সীতা, রাম, লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন এবং হনুমান। গোটা আখড়া চত্বর জুড়ে রঙেবেরঙের আলো দিয়ে সাজানো, সাধারণ মানুষের ভিড়, বড় মেলা গত বছর দুয়েক থেকে সবই কেমন হারিয়ে গিয়েছে নশিপুরের কয়েক শতাব্দীর প্রাচীন ঝুলনযাত্রার। ওই কোনও রকমেই যতটুকু নিয়ম না করলেই নয় ততটুকুই পালন করেই হল নশিপুর আখড়ার ঝুলনযাত্রা।
জেলার ইতিহাসবিদরা জানাচ্ছেন, অনুমানিক ১৭৫৮ সালে ঢাকার উর্দু বাজার থেকে রামানুজ বৈষ্ণব ধর্মের এক সাধক মহন্ত লক্ষ্মণ দাস আচারি। এসে মিরজাফরের বাড়ির পিছনে জঙ্গলে ছোট্ট করে ঘর তৈরি করে পুজোপাঠ শুরু করেন। ওই সময় থেকেই শুরু হয় আখড়ার ঝুলন যাত্রার উৎসব। তারপর আস্তে আস্তে তা বড় আখড়ায় পরিণত হয়।
জানা যায়, ১৮৭০ সালে গোপালদাস আচারির সময় শ্রীবৃদ্ধি ঘটে আখড়ায়। বড় দালান নাট মন্দির, আখড়ার ভেতরের রাজপ্রাসাদ সবই তৈরি হয়ে ছিল গোপাল দাস আচারির সময়। ওই সময় থেকেই বড় হয় ঝুলন যাত্রার উৎসবও, বলেই জানান আখড়ার বর্তমান সেবাইত রাঘব দাস আচারি। প্রতি বছর তৃতীয়া থেকে শুরু হয় নশিপুর আখড়ার ঝুলনযাত্রার উৎসব চলে জন্মাষ্টমী পর্যন্ত। ঝুলনযাত্রা শুধু কৃষ্ণরাধা নন দোলনায় ঝুলেন সীতা, রাম, লক্ষ্মণ, ভরত, শক্রঘ্ন, হনুমান এবং লক্ষ্মী নারায়ণও।
প্রতিবছর ঝুলনে সাজানোর জন্য বৃন্দাবন থেকে লোকও আনা হয়। ঝুলন উপলক্ষে বসত বড় মেলাও। নশিপুরে আখড়ার ঝুলনযাত্রা দেখতে বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ আসে। ঝুলনযাত্রা উপলক্ষে প্রতিবছর আখড়ার দালানে বসে বাউল, যাত্রাপালা, কবিগানের আসর। যদিও এবছর মহামারি পরিস্থিতি সে সব কিছুই হচ্ছে না কোনও রকমেই পালন করা হচ্ছে ঝুলনযাত্রা।
এদিন নশিপুর আখড়ার বর্তমান সেবাইত রাঘব দাস আচারি বলেন, ‘‘করোনার কারনেই গত বছরের মত এ বছরও জাঁকজমকহীন ঝুলনযাত্রার উৎসব। সব ঠিকঠাক থাকলে আবার আগের মতোই পালন করা হবে।’’