Sagardighi By Election

হ্যালো মাইক টেস্টিং... প্রথম বড় পরীক্ষার আগে ‘শব্দ পরীক্ষা’ পাশই চ্যালেঞ্জ সাগরদিঘির পড়ুয়াদের

মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ২৩ ফেব্রুয়ারি। আর সাগরদিঘির রাজনৈতিক পরীক্ষা ২৭ ফেব্রুয়ারি। এই সন্ধিক্ষণে সেখানকার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং অভিভাবক— সকলের অভিযোগ, মাথায় উঠেছে পড়াশোনা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:৩০
Madhyamik examinees of Sagardighi are tired of microphone before by election

শব্দের দাপটে অতিষ্ঠ সাগরদিঘির পড়ুয়ারা। প্রতীকী চিত্র।

মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ২৩ ফেব্রুয়ারি। আর সাগরদিঘির রাজনৈতিক পরীক্ষা ২৭ ফেব্রুয়ারি। এই সন্ধিক্ষণে সেখানকার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং অভিভাবক— সকলের অভিযোগ, মাথায় উঠেছে পড়াশোনা। একে মাইক্রোফোনের দাপট, মিটিং-মিছিল, সেই সঙ্গে উপনির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় লেগে রয়েছে তারকা নেতানেত্রীদের আনাগোনাও। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের দাবি, এই দুইয়ের জেরে ‘ব্যাঘাত’ ঘটছে সাগরদিঘির পড়ুয়াদের মনঃসংযোগে।

এখন সন্ধ্যা হতে না-হতেই প্রায়শই সাগরদিঘির বিভিন্ন এলাকায় শোনা যায়, ‘‘হ্যালো, মাইক টেস্টিং, জিরো, ওয়ান, টু, থ্রি...।’’ তার পর শুরু গরমাগরম বক্তৃতা। রাজনৈতিক দলের সেই সভামঞ্চ থেকে ঢিলছোড়া দূরে ঠিক তখনই হয়তো কোনও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী খুলে বসেছে সংখ্যাতত্ত্বে ভরপুর ইতিহাসের বই। এখন এই দৃশ্য বহু বার তৈরি হচ্ছে সাগরদিঘিতে। ঠিক তেমনই অভিজ্ঞতার কথা শোনাল সাগরদিঘি বিধানসভা এলাকার পাটকেলডাঙার এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব মণ্ডল। সে সাগরদিঘি এসএন হাইস্কুলের ছাত্র। তার কথায়, ‘‘দিন কয়েক আগে সন্ধ্যায় যেই পড়তে বসছি অমনি বাড়ির সামনে দিয়ে একটা মিছিল গেল। সেখানে স্লোগান উঠছে ঘন ঘন। এই ভাবে কি আর পড়াশোনা হয়!’’

Advertisement

ভোটের মুখে শব্দ-যন্ত্রণার কথা শোনাল সাগরদিঘির মণিগ্রামের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাবেয়া সুলতানাও। সাগরদিঘির মোড়গ্রাম হাই স্কুলের ছাত্রী সে। তার কথায়, ‘‘মাইকের শব্দে কী পড়ছি নিজেই শুনতে পাচ্ছি না। মাথায় ভীষণ চাপ পড়ছে। কিছু ক্ষণের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হচ্ছে মাথায়।’’ আবার পড়ুয়াদের এ হেন সমস্যা নিয়ে সাগরদিঘি শহরের বাসিন্দা শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের আক্ষেপ, ‘‘পরীক্ষার আগের পড়াশোনাটা জরুরি। পরীক্ষার দিন তো আর পড়াশোনা হয় না! কিন্তু ভোটের গুঁতোয় সেই সব আর হল কই!’’

সাগরদিঘিতে মোট ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখান থেকে এই বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে ৩,২৩৭ জন। সাগরদিঘির উপনির্বাচনের দিন ঘোষণার পর বদলেছে মাধ্যমিকের নির্ঘণ্টও। কিন্তু তাতে শব্দের দাপটে লাগাম পরানো যায়নি বলেই অভিযোগ পড়ুয়াদের। শব্দ দৌরাত্ম্যের সঙ্গে সাগরদিঘিতে পা পড়ছে হেভিওয়েট বা তারকা নেতানেত্রীদেরও। অভিভাবকদের একটি অংশের বক্তব্য, সেই ‘আলো’ও টানছে পরীক্ষার্থীদের একাংশকে। ঠিক সেই কথাই উঠে এল সাগরদিঘির কাবিলপুরের বাসিন্দা আখতারুল মণ্ডলের কথায়। তাঁর ছেলে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি দিনই কমবেশি বিভিন্ন দলের তারকা নেতানেত্রী আসছেন। যাঁদেরকে টিভিতে বা ফেসবুকে ছাত্রছাত্রীরা দেখে তাঁদেরকে সামনে থেকে দেখতে পাওয়ার নেশা কেউ আটকাতে পারছে না।’’

পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা শুনে তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁরা নির্বাচন কমিশনের সমস্ত নির্দেশিকা মেনে প্রচার করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও কোনও অনিয়ম হয়নি।’’ অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী দিলীপ সাহার যুক্তি, ‘‘পরীক্ষা তো বুঝতে পারছি। কিন্তু প্রচারটাও তো করতে হবে। কী আর করব বলুন!’’ আবার বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী বায়রন বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে আমরা ছোট ছোট প্রচার কর্মসূচিতে জোর দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত।’’

সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল বেরোবে দ্রুত, ২ মার্চ। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলের জন্য অবশ্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে মে মাস পর্যন্ত।

আরও পড়ুন
Advertisement