নানা অচেনা রান্নার এই নতুন শখের কারণে পাড়ার মুদিখানা থেকে স্টেশনারি দোকানে এখন এমন এমন মশলা বা উপকরণের খোঁজ পড়ছে, যার ব্যবহার বা বিক্রি আগে সে ভাবে ছিল না। কৃষ্ণনগরের মুদি দোকানি সুব্রত দাস বলছেন, “আগে দোকানে মেয়নেইজ় রাখতাম না। কিন্তু এখন ক্রেতার চাহিদা তৈরি হয়েছে। আবার অনেকে এসে চিলি ফ্লেক্স বা অরেগ্যানোর মতো মশলার খোঁজ করছেন যা আমার দোকানে নেই।” বাড়তে থাকা চাহিদা দেখে এখন সে সবও রাখার কথা ভাবছেন সুব্রত।
গত বছর লকডাউনে তো বটেই, এ বারও বিধিনিষেধে বহু হোটেল-রেস্তরাঁ টিমটিম করে চলছে। অনুষ্ঠান বাড়িতে কড়াকড়ি থাকায় কেটারিং ব্যবসাও প্রায় শিকেয় উঠেছে। ফলে রান্নার মশলাপাতির পাইকারি বিক্রি ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু মূলত শহর এলাকায় পাড়ায়-পাড়ায় খুচরো বিক্রি বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন অনেক মুদি দোকানি। সুব্রতর কথায়, “লকডাউনে যখন সমস্ত হোটেল-রেস্তরাঁ বন্ধ ছিল, তখন সাধারণ খরিদ্দারের বিরিয়ানির মশলা আর চালের চাহিদা ভীষন বেড়ে গিয়েছিল। যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এখনও সে সবের ভাল চাহিদা আছে।” এ ছাড়া হরেক রকম রান্নার জন্য বিভিন্ন ধরনের সস, কাজু, পেস্তা, জাফরানের ভাল বিক্রি বলে জানান তিনি। শান্তিপুরের মুদি দোকানি বিনয় হালদার বলেন, “চল্লিশ বছরের পুরনো আমাদের এই দোকানে এত দিন সর্ষের তেল আর রিফাইন তেল ছাড়া অন্য কোনও তেল বিক্রি হয়নি। লকডাউনে দেখি অলিভ অয়েলের খোঁজ করছেন অনেকে। আর এখন তো চিজ় থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম সস, সবই রাখতে হচ্ছে।”
পাড়ার দোকানে কোনও কিছু না পেলে তখন অনলাইন ভরসা। শান্তিপুরের মধুমিতা দাসের কথায়, “কিছু দিন হল বেশির ভাগ জিনিসই পাড়ার মুদির দোকানে পাচ্ছি। তার আগে মেয়নেইজ় পর্যম্ত অনলাইনেই কিনতে হয়েছে।” রান্নার শখের ধাক্কায় কাজ বেড়েছে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ানো আনাজের ফেরিওয়ালারও। শাক-সবজির সাথে তাঁদেরও খুঁজে খুঁজে আনতে হচ্ছে মাশরুম থেকে রঙিন বেলপেপার। কৃষ্ণনগরের এক আনাজ বিক্রেতা সুশান্ত মণ্ডল বলেন, “আলু-পটল-উচ্ছের সঙ্গে এখন লেটুস পাতা বা লাল-হলুদ বেলপেপারেরও খোঁজ পড়ছে প্রায়ই। এক জন এক দিন মোটা বাঁশ নিয়ে আসতেও বলেছিলেন ব্যাম্বু চিকেন না ব্যাম্বু বিরিয়ানি কী যেন একটা বানাবেন বলে!”