Corruption Case

দলিল, রেকর্ড জালিয়াতির অভিযোগ

রানিনগর থানায় এলাকার বধূর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ওহাব আলীর অভিযোগ, তাঁর ও তাঁর ভাই টমাস সরকারের প্রায় আট বিঘা জমি জালিয়াতি করে দখল নেয় এলাকার কলবলি তলার বাসিন্দা রাসেল শেখ ও সেন্টু মণ্ডল।

Advertisement
সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
রানিনগর  শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৫:৫১

—প্রতীকী চিত্র।

জমির দলিল এবং রেকর্ড জালিয়াতি ডোমকলে এখন আকছার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ। মালিকের অজান্তে আচমকা হয়ে যাচ্ছে জমির হাত বদল। অভিযোগ, কোনও রকম নোটিস ছাড়াই সকাল বিকেল বদলে যাচ্ছে জমির রেকর্ড। এমনকি এক যুগ আগে মৃত ব্যক্তির নামেও রেকর্ডের নজির গড়েছে ডোমকল। তবে এ বার দলিল জালিয়াতি করে পুলিশের হাতে পাকড়াও হয়েছে দুই জমি মাফিয়া। গ্রেফতার হয়েছে গোয়াস জমি রেজিস্ট্রি অফিসের এক দলিল লেখক। যা দেখে প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষের দাবি, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং জমির রেজিস্ট্রি অফিসে যে ধরনের জালিয়াতি হচ্ছে তাতে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে বিশেষ করে লেখাপড়া না জানা দরিদ্র পরিবারে হানা দিচ্ছে জমি হাঙরেরা।

Advertisement

রানিনগর থানায় এলাকার বধূর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ওহাব আলীর অভিযোগ, তাঁর ও তাঁর ভাই টমাস সরকারের প্রায় আট বিঘা জমি জালিয়াতি করে দখল নেয় এলাকার কলবলি তলার বাসিন্দা রাসেল শেখ ও সেন্টু মণ্ডল। তাঁদের দাবি, ওই দু’জন যাবতীয় নথি জাল করে নকল দলিল বানিয়ে জমি হাতিয়ে নেয় তাঁদের পরিবারের। ওহাবের দাবি, ‘‘প্রথমে আমার এক কাকা লিয়াকত আলির জমি জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেয় রাসেল ও সেন্টু। তারপরে আমার আরও এক ভাই টমাস সরকারের কাছ থেকেও জালিয়াতি করে জমি হাতিয়ে নেয়। শেষে আমার বিঘা দুয়েক জমিতেও হাত লাগায় ওরা। তারপরেই আমি আদালতের দ্বারস্থ হই, শেষ পর্যন্ত কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ে। দেখা যায় সবটাই জালিয়াতি করে হাতানো হয়েছে।’’ শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশেই গোয়াস জমি রেজিস্ট্রি দফতরের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। আর তারপরেই পাকড়াও হয় অভিযুক্তরা।

অভিযোগ পেয়ে ইসলামপুর থানার পুলিশ মাঠে নেমে গ্রেফতার করে রাসেল ও সেন্টুকে। পরে তাদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে দলিল লেখক বদিউজ্জামানকেও গ্রেফতার করা হয়। যদিও বদিউজ্জামানর বোন নওজাতুন নেসার দাবি, ‘‘জালিয়াতি করেছে রাসেল, সেন্টু, আমার দাদা ওই বিষয়ে কিছুই জানে না। তার সামান্য ভুলের জন্য তাকে জেলে যেতে হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘কেবল ওই দু’জন নয়, ভূমি সংস্কার দফতরের, রেজিস্ট্রি অফিসের কর্তারাও এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। জালিয়াতি করে দলিল তৈরি হল আর দফতরের কর্তারা কিছুই জানল না, এমনটা হতে পারে না। আমরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাইছি।’’ অন্য দিকে এই ঘটনা নিয়ে রানিনগরের বিধায়ক সৌমিক হোসেন বলছেন, ‘‘জমি নিয়ে অত্যন্ত বাজে ঘটনা ঘটছে রানিনগরে। অনেক অসহায় পরিবার এই জমি মাফিয়াদের জন্য সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। আমি গোটা ঘটনাটা নিয়ে প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলব।’’

তবে কেবল রানিনগর নয় ডোমকল জলঙ্গিতেও এর আগে দেখা গিয়েছে এক যুগ আগে মৃত ব্যক্তির জমি রেকর্ড হয়ে গিয়েছে অন্যের নামে। কোনও রকমের নোটিস ছাড়াই জমির হাত বদল হয়ে যাচ্ছে সেখানেও। রাতের অন্ধকারে মোটা টাকার বিনিময়ে সে সব কাজ চলছে বলেই অভিযোগ সাধারণ মানুষের।

ইসলামপুরের বাসিন্দা ধীমান দাস বলছেন, ‘‘অনেক অশিক্ষিত অসহায় পরিবার জমি মাফিয়াদের কব্জায় পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের আরও একটু কড়া ভূমিকা নেওয়া উচিত এই বিষয়টি নিয়ে। না হলে অনেক পরিবার পথে বসবে।’’

রানিনগর দুই ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক দীপঙ্কর দাস বলছেন, ‘‘এই ঘটনায় আমাদের কিছুই করার নেই। কারণ গোটা প্রক্রিয়াটাই হয় অনলাইনে। রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জালিয়াতি হলে আমাদের কিছুই করার থাকে না।’’

আর গোয়াস জমি রেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্টার সৌভিক ধারা বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছি। অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়েছে।’’

যদিও সাধারণ মানুষের দাবি সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে। প্রশাসন উদ্যোগ নিলে অনেকেই গ্রেফতার হবেন। সমস্যার সমাধানও হবে।

আরও পড়ুন
Advertisement