TMC Internal Conflict

দ্বন্দ্বের মেঘ জমছে, উদ্বেগে তৃণমূল

জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান কানাই চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘রাগ ক্ষোভ অভিমান থাকতে পারে। তবে সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকবেন।

Advertisement
সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২০
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সেই পঞ্চায়েত ভোটের টিকিট দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। দলের চার বিধায়ক বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটপর্ব মিটতে সেই কোন্দল খানিকটা থিতু হলেও গত সপ্তাহে জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রকি জেলা তৃণমূলের সভাপতি শাওনি সিংহ রায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। এরই মধ্যে দু’দিন আগে ভগবানগোলার তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিস আলি দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতের পদ ১০-১৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ তুলেছেন। সেই রেশ কাটতে না কাটতে বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী শাহনাজ বেগম এবং জঙ্গিপুরের তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল আলমের পদত্যাগের খবর প্রকাশ্যে এসেছে। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে মুর্শিদাবাদের দুই সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের এমন ডামাডোল প্রকাশ্যে এসেছে। রাজনৈতিক কারবারিরা বলছেন, এখনই তৃণমূল কোন্দল মেটাতে না পারলেও লোকসভা ভোটে তার প্রভাব পড়তে পারে।

Advertisement

জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায় বলেন, ‘‘শাহনাজ কেন পদত্যাগ করেছেন জানি না। নিশ্চয় এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলব। আর দলের ভিতরের বিষয় নিয়ে বিধায়কদের এভাবে সংবাদ মাধ্যমে মুখ খোলা উচিত নয়। যা বলার দলের ভিতরে বলা উচিত। ইদ্রিসদার সঙ্গে কথা বলব।’’

জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান কানাই চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘রাগ ক্ষোভ অভিমান থাকতে পারে। তবে সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকবেন। আমরা সহিদুলদের সঙ্গে কথা বলব।’’

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা জুড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল দেখা দিয়েছিল। তখন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, রেজিনগরের তৃণমূল বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরী, নওদার বিধায়ক সাহিনা মমতাজ খান, জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক বেলডাঙায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। পরে তাতে যোগ দেন হরিহরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক নিয়ামত শেখ। দলের রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে বিদ্রোহীরা বিধায়কেরা শান্ত হন। ফের গত সপ্তাহে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক ও যুব তৃণমূলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রকির মধ্যে বিরোধ বাঁধে। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বাম সিপিএম-বিজেপির সমর্থন নিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে। সেই আবহে দল বিরোধী কাজের অভিযোগে জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী শাওনি সিংহরায় আব্দুর রাজ্জাককে শো-কজ়ও করেন। তবে তা হোয়াটসঅ্যাপের একটি বার্তায় করা হয়েছিল বলে দাবি। তখন রাজ্জাক অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, জেলা তৃণমূল সভানেত্রীকে যুব সভাপতি ও সেখানকার ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেও বিশেষ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন না।

দু’দিন আগে কলকাতায় ভগবানগোলার তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিস আলি অভিযোগ তোলেন ভগবানগোলা ২ ব্লকে পঞ্চায়েতের টিকিটের মতো পঞ্চায়েতের পদ ও ১০-১৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছেন। অন্যদিকে তিন বারের জেলা পরিষদ সদস্য তথা জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী শাহনাজ বেগম গত ১৮ অগস্ট পদত্যাগ করলেও শনিবার তা প্রকাশ্যে এসেছে। রবিবার মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের তিন বারের জয়ী সদস্য মহসিনা খাতুনের স্বামী জঙ্গিপুর সাংগঠনিকে জেলা তৃণমূলের সাধা্রণ সম্পাদকের পদ থকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁদের জেলা পরিষদের জায়গা না দেওয়ায় পদত্যাগ করেছেন বলে তাঁদের ঘনিষ্ঠ লোকজনেরা বলছেন।

জেলা তৃণমূলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘এতে দলের অবশ্যই ক্ষতি হবে। মানুষের কাছে ঠিক বার্তা পৌছচ্ছে না। এঁদের কথাবার্তায় তৃণমূলের কর্মীরা আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছেন, আর বিরোধীরা সুযোগ গ্রহণ করছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘দলের ঘোষিত নীতির বাইরে একাজ করেছে তাঁদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করি। পুরো বিষয় আমরা রাজ্য নেতৃত্বকে জানাব।’’

আরও পড়ুন
Advertisement