Imam

‘ভাতা বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করতে হবে’! যৌথ সভা করে দাবি ইমাম ও পুরোহিতদের সংগঠনের

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দাবির বিরোধিতা করেনি শাসক শিবিরের জেলা নেতৃত্ব। বরং, সেই দাবিকে যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে করছেন তাঁরা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৩ ২১:২৩
রাজ্য সরকারকে হুঁশিয়ারিও দিল ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সংগঠন। তাদের দাবি, ভাতা বাড়াতে হবে। নিজস্ব ছবি।

রাজ্য সরকারকে হুঁশিয়ারিও দিল ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সংগঠন। তাদের দাবি, ভাতা বাড়াতে হবে। নিজস্ব ছবি।

সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ শাসকদল তৃণমূল। তার মধ্যে এ বার রাজ্য সরকারকে হুঁশিয়ারিও দিল ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সংগঠন। তাদের দাবি, ভাতা বাড়াতে হবে। নইলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বড় আন্দোলনের পথে নামবে তারা। প্রয়োজনে ‘বিকল্প পথের’ কথাও ভাববে। পুরোহিতদের সংগঠন বঙ্গীয় সনাতন ব্রাহ্মণও এই দাবিকে সমর্থন করেছে। দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য যৌথ মঞ্চ গড়ারও ডাক দিয়েছেন তারা। অবশ্য ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দাবির বিরোধিতা করেনি শাসক শিবিরের জেলা নেতৃত্ব। বরং, সেই দাবিকে যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে করছেন তাঁরা। অন্য দিকে, তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। দলের রাজ্যসভা সাংসদ শান্তনু সেনের বক্তব্য, রাজ্যের বিপুল পরিমাণ পাওনা টাকা এখনও মেটায়নি কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে কোনও প্রকার রাজনৈতিক চাপ তৈরির আগে সেই বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত।

পালাবদলের পর ক্ষমতায় এসে ২০১২ সালে রাজ্যে ইমাম ভাতা চালু করেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেই থেকে ইমামেরা প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা পান। আর মুয়াজ্জিনেরা মাসে পান এক হাজার টাকা। সংগঠনের দাবি, গত ১০ বছরে দ্রব্যমূল্য আকাশ ছুঁলেও ভাতার অঙ্ক বাড়েনি। অন্য দিকে, পুরোহিতদের ভাতা চালু হয়েছিল ২০২০ সালে। তাঁদের সংগঠনের অভিযোগ, রাজ্যে ৭০ হাজারের কাছাকাছি পুরোহিত থাকলেও ভাতা পান মাত্র ৮ হাজার। দুই সংগঠনেরই দাবি, অবিলম্বে ভাতার ন্যূনতম অঙ্ক ১০ হাজার টাকা করতে হবে।

Advertisement

গত শনিবার মুর্শিদাবাদের লালবাগের পুরনো মতিঝিল পার্কে সারা বাংলা ইমাম-মুয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্টের রাজ্য সম্মেলন ছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই মঞ্চে পুরোহিতদের সংগঠনের প্রতিনিধিদেরও দেখা গিয়েছে। তৃণমূলের তরফে হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর, মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান, ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর-সহ দলের বেশ কয়েক জন সংখ্যালঘু নেতা। ওই মঞ্চ থেকেই ইমামদের সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক নিজামুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভাতা চালু হওয়ার পর তা আর বাড়েনি। সংগঠনের পক্ষ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ১৫টি চিঠি দিয়েছি। সংখ্যালঘু দফতরে বার বার ধর্না দিয়েছি। কথা বলেছি। তারা কখনও ববি হাকিমকে দেখায়, কখনও অন্য কাউকে দেখায়। কিন্তু কোথাও গিয়ে আমাদের দাবির সুরাহা হয়নি।’’ ভাষণে নিজামউদ্দিন দাবি করেন, তৃণমূলকে তৃতীয় বার ক্ষমতায় আনতে তিনি নিজে উদ্যোগী হয়েছিলেন। বলেন, ‘‘নির্বাচনের সময় আমাদের সঙ্গে দু’বার প্রশান্ত কিশোর বৈঠক করেছিলেন। তৃণমূলের হয়ে প্রচারের জন্য হেলিকপ্টার, গাড়ি ও পর্যাপ্ত অর্থের জোগানও দেওয়া হয়েছিল। প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক-এর সঙ্গে মিলে ৩৫০টি সভা করেছিলাম। আমার নিজের জেলাতেই ৭৬টির উপর সভা করেছিলাম। আমার জেলার সব বিধায়ক, সাংসদ সেই কথা জানেন।’’

ইমামদের পাশে দাঁড়ান বঙ্গীয় সনাতন ব্রাহ্মণ সংগঠনের সহ-সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তীও। তাঁরও বক্তব্য, “প্রাপ্য সুযোগসুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত। তাই নিজামুদ্দিন সাহেবকে বলেছি, আমরা আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে যৌথ মঞ্চ গড়ে রাজ্য জুড়ে ঝড় তুললে সরকার আমাদের দিকে দৃষ্টি দিতে বাধ্য হবে।” ভোট বৈতরণী পার করতে ইমাম ও পুরোহিতদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছে দুই সংগঠন। নিজামুদ্দিন বলেন, “আমরা প্রয়োজনে বিকল্প পথ ভাবব।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘সাগরদিঘির মানুষকে সরকারের হয়ে বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা কেউ সেই কথা শুনতেই চাননি। তৃণমূলের পক্ষে আর কোনও কথা শুনছেন না মানুষ।”

এ ক্ষেত্রে ইমাম ও পুরোহিতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুর্শিদাবাদের সাংসদ। দুই সংগঠনের দাবির কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন বলেও জানিয়েছেন আবু তাহের। বলেন, ‘‘ওঁদের ভাতা বৃদ্ধির দাবি সঙ্গত। আমরা ওঁদের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব।’’ শান্তনুর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কথা কেউ যদি প্রথম ভেবে থাকেন, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওনা রাজ্যের। কোনও প্রকার রাজনৈতিক চাপ তৈরির আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রীয় অসহোগিতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইটাও মাথায় রাখতে হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement