Nakashipara Murder Case

নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় খুন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী, অভিযুক্ত কংগ্রেস এবং সিপিএম

তবে স্থানীয় একটি সূত্র জানাচ্ছে, নাকাশিপাড়া থানা এলাকার হরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দু’গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরেই এই হামলা এবং খুনের ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১০:১৪
নিহত জহিদুল শেখ।

নিহত জহিদুল শেখ। নিজস্ব চিত্র।

ইদের বাজার করে বাড়ি ফেরার পথে খুন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী! গুরুতর আহত সেই পঞ্চায়েত সদস্যা এবং আরও দু’জন। বুধবার রাতে এই ঘটনার নেপথ্যে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। যদিও এই ঘটনাকে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্ব বলেই উল্লেখ করছে সিপিএম।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার রাতে ইদের বাজার সেরে বন্ধুর গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা তাগিরা বিবি এবং তাঁর স্বামী জহিদুল শেখ। গাড়িতেই ছিলেন তাঁদের পুত্র ও পারিবারিক এক বন্ধু। ৩৫ বছরের জহিদুলই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। বাড়ি থেকে কিছুটা আগেই রাস্তায় গাছ ফেলে রেখেছিল দুষ্কৃতীরা।

গাড়ি দাঁড়াতেই রাস্তা আটকে দাঁড়ায় জনা দশেক দুষ্কৃতী। শুরু হয় গাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজি। এর পরে গাড়ির দরজা খুলে যাত্রীদের এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে ঘাতকেরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামীর জহিদুলের। গুরুতর জখম হন পঞ্চায়েত সদস্যা-সহ অন্য তিন জন। চিৎকার শুনে স্থানীয়েরা ছুটে এসে চার জনকে উদ্ধার করে বেথুয়াডহরি হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা সেখানে জহিদুলকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করেন। অন্যদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল স্থানান্তর করা হয়।

আক্রান্তদের অভিযোগ, কংগ্রেস এবং সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই হামলা চালিয়েছে। ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত দুই দল। মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে, ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পাল্টা উঠে এসেছে শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্বের অভিযোগের কথা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরেই নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানা এলাকার হরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে জুব্বরের গোষ্ঠী এবং তার বিরোধী গোষ্ঠীর গন্ডগোল ছিল। এলাকার পরিচিত ‘বাহুবলি’ জুব্বরের ‘ডান হাত’ বলেই পরিচিত ছিলেন নিহত জাহিদুল শেখ। দু’পক্ষই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী।

বুধবার রাত্রি ৯টা নাগাদ জুব্বরের ব্যক্তিগত গাড়িতে স্থানীয় হরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য স্ত্রী তাগিরা, পুত্র রকিব শেখ এবং প্রতিবেশী আদ্রুপ শেখকে চাপিয়ে বেথুয়াডহরিতে ইদের বাজার করতে গিয়েছিলেন জাহিদুল। রাত্রি সাড়ে ৯টা নাগাদ, বাড়ির কাছে ঘুনির মোড় অতিক্রম করতেই রাস্তায় গাছ পড়ে থাকতে দেখা যায়। কাচ খুলতে গাড়ি লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু বোমাবাজি শুরু হয় বলে অভিযোগ। গোটা এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে গেলে জনা দশেক দুষ্কৃতী ছুটে এসে গাড়ির দরজা খুলে চার যাত্রীকে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে। যদিও তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিলেন জহিদুল, এমনটাই তাঁর স্ত্রীর দাবি। হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। দুষ্কৃতীদের খোঁজে শুরু হয়েছে চিরুনিতল্লাশি।

আহত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা তাগিরা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘রাস্তায় খেজুরের গাছ ফেলে গাড়ি আটকে দিয়েছিল। আমার স্বামী মুখ বার করে দেখতে গেলেই বোমা চার্জ করে। মুহূর্তের মধ্যে ১০-১২ জন ছুটে এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাদেরকে কোপাতে শুরু করে। দুষ্কৃতীরা প্রত্যেকে পরিচিত। তারা সিপিএম এবং কংগ্রেসের আশ্রিত।’’ কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী এমএস সাদি ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের মস্তান বাহিনী জমি-সহ একাধিক আর্থিক কারণে নিজেদের মধ্যে গন্ডগোলে যুক্ত। ভাগাভাগি নিয়ে গন্ডগোলের জেরে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। এই ঘটনার সঙ্গে সিপিএম কোনও ভাবেই যুক্ত নয়।’’ প্রসঙ্গত, গত অগস্টে নাকাশিপাড়ার ধাপারিয়া অঞ্চলে তৃণমূল বুথ সভাপতি মহতালি দফাদারের বাড়িতে ঢুকে একদল দুষ্কৃতী তাঁকে খুন করেছিল। সে সময়ও দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল।

আরও পড়ুন
Advertisement