laxmi puja

রাধা একক ভাবে পূজিত হন লক্ষ্মীরূপে

এমন রাতেই নবদ্বীপের একাধিক বৈষ্ণব মন্দিরে প্রায় তিনশো বছর ধরে পূজিতা হন পালার ঠাকরুন! ইনি আর কেউ নন, স্বয়ং শ্রীমতী রাধারানি।

Advertisement
দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২২ ১০:২১
রাধারানি।

রাধারানি। ছবি সংগৃহীত

“নিশীথে বরদে লক্ষ্মী, কোজাগর্তী মহীতলে।” ধন এবং বরপ্রাপ্তির আশায় শারদ পূর্ণিমার রাতে মহালক্ষ্মীর পুজো সেই মধ্যযুগ থেকে বঙ্গদেশের বণিকেরা করে আসছেন। পরিবর্তী কালে যা কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো বলে জনপ্রিয়তা প্রায় সর্বসাধারনের মধ্যে।

এমন রাতেই নবদ্বীপের একাধিক বৈষ্ণব মন্দিরে প্রায় তিনশো বছর ধরে পূজিতা হন পালার ঠাকরুন! ইনি আর কেউ নন, স্বয়ং শ্রীমতী রাধারানি। কোজাগরীর রাতে তাঁকেই লক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয় নবদ্বীপের মদনমোহন ও বলদেব মন্দিরে।

Advertisement

শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া শ্রীমতী একক ভাবে পূজিত হচ্ছেন, এমন বড় একটা দেখা যায় না। কিন্তু সেই প্রথাই সুদীর্ঘ কয়েক শতক ধরে পালন করে আসছেন চৈতন্যসখা নিত্যানন্দ আচার্যের উত্তরপুরুষেরা। এই প্রসঙ্গে নিত্যানন্দের চতুর্দশ বংশধর এবং মদনমোহন মন্দিরের অন্যতম সেবায়েত নিত্যগোপাল গোস্বামীর ব্যাখ্যা, অভিভক্ত বঙ্গদেশের ঢাকা জেলার বুতুনী গ্রামে নিত্যানন্দ প্রভুর অধস্তন পঞ্চম পুরুষ হরিগোবিন্দ প্রভু রাধাকৃষ্ণের যুগলবিগ্রহ স্থাপন করেন। ঘটনাচক্রে সেই কৃষ্ণমূর্তি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলে বাধ্য হয়ে সেটি বিসর্জন দিতে হয়। এরপর রাধারানির স্বপ্নাদেশ অনুসারে একক ভাবে তাঁর পুজো হতে লাগল। বিভিন্ন শরিক পালা করে তাঁর সেবা করতেন বলে নাম হল, পালার ঠাকরুন। বলদেব মন্দিরের অন্যতম সেবায়েত কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, “১৮৯৫-৯৬ সাল নাগাদ নিত্যানন্দ আচার্যের অধস্তন প্রাণগোপাল গোস্বামী নবদ্বীপ চলে আসেন। সঙ্গে আসেন পালার ঠাকরুনও। মদনমোহন এবং বলদেব— এই দুই মন্দিরে পালা করে এক-এক বছর থাকেন তিনি। এ বার প্রথমে মদনমোহন মন্দিরে পুজো হবে। তার পর বলদেব মন্দিরে নিয়ে গিয়ে আরও এক বার লক্ষ্মী হিসাবে তাঁর পুজো হবে। পরের বার উল্টো হবে।” নিত্যগোপাল গোস্বামী বলেন “ব্যতিক্রমী এই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর রাতে ধানের উপর পাতা হয় রাধার আসন। আয়োজন লক্ষ্মীপুজোর মতো। কিন্তু লক্ষ্মীর ধ্যান বা মন্ত্র কিছুই ব্যবহার হয় না। পরিবর্তে উচ্চারিত হয়, “দেবী কৃষ্ণময়ী প্রোক্তা রাধিকা পরদেবতা। সর্বলক্ষ্মীময়ী সর্বকান্তি: সন্মোহিনী পরা।” নিত্যগোপাল গোস্বামী জানান, গৌতমীয় তন্ত্র উল্লিখিত ওই প্রার্থনা লক্ষ্মীরূপী শ্রীমতী রাধারানির উদ্দেশ্যে জানানো হয়। দেশভাগের সময় নদিয়ার এসেছিল বহু ছিন্নমূল পরিবার। সঙ্গে এনেছিল কোজাগরী লক্ষীপুজোর প্রথা-প্রকরণ। যশোর, খুলনা, রাজশাহী ছেড়ে করিমপুর, নবদ্বীপ বা রানাঘাটে চলে আসা অসংখ্য পরিবারে কোজাগরীর রাতে এখনও উঠোনে, বারান্দায় আলপনায় আঁকা হয় লক্ষ্মীর পা, ধানের শিস। কোথাও কলাবউ গড়ে পুজো হয়, কোথাও লক্ষ্মীর সরায়। কোনও বাড়িতে আবার বেতের ছোট ঝুড়িতে ধান ভর্তি করে তার উপর দু’টি কাঠের লম্বা সিঁদুর কৌটো লালচেলি দিয়ে মুড়ে দেবীর রূপ দেওয়া হয়। একে বলা হয়, আড়ি লক্ষ্মী।

পূর্ববঙ্গের গ্রামে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোই ছিল বড় উৎসব। ঘরে তৈরি নারকেল, চিঁড়ে, তিল দিয়ে মোয়া, মুড়কি, নাড়ু, তক্তি, সঙ্গে আলপনা আর লক্ষ্মীর ছড়ায় কোজাগরী জমে ওঠে দোগাছি, জাহাঙ্গীরপুর, আনন্দনগর, শম্ভুনগরের মতো গ্রাম বা নবদ্বীপ, চাকদহ, ফুলিয়া, রানাঘাটের মতো শহরে।

আরও পড়ুন
Advertisement