শমসেরগঞ্জের গ্রামে ভাঙনের পরে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে গঙ্গার পাড়ের বাড়ির জিনিসপত্র। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভাঙা বাড়ির ইট। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
জল কমতেই ফের ভাঙন শুরু হয়েছে শমসেরগঞ্জের কামালপুরে। গত ৪ দিনে ৬টি বাড়ি ধসে পড়েছে গঙ্গায়। গঙ্গা পাড়ের অন্তত ১৬টি বাড়ির দুয়ারে গঙ্গা এসে পড়ায় ঘর ভেঙে নিতে শুরু করেছেন নিজেরাই।
দীর্ঘ দিন থেকে দফায় দফায় শমসেরগঞ্জের যে কটি গ্রাম গঙ্গা ভাঙনের মুখে পড়েছে কামালপুর তার অন্যতম। গত সপ্তাহে কামালপুরে গঙ্গায় জলস্তর চরম বিপদসীমা ২২.৫১ মিটারের ১০ সেন্টিমিটার নীচে ছিল। তারপর থেকে কমতে শুরু করেছে জল। বুধবার প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার জল কমেছে। জল এখনও কমছে। আর ভাঙন সেই কারণেই, বলছে সেচ দফতর।
নিমতিতা গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের মহম্মদ সেহাবুদ্দিন খান বলেন, “৪ দিন থেকে ভাঙছে নদী। ৬ খানা বাড়ি গঙ্গায় ধসে গিয়েছে। নুরুল শেখ, মোস্তফা শেখ, সেলিম শেখ, ফারুক শেখ, মোজা শেখ, মনিরুল শেখের পাকা দেওয়াল ও টিনের ছাদ। আশপাশে ১৬টি বাড়ি নদী থেকে ১০ ফুটের মধ্যে। তাই ভয়ে বাড়ি ভেঙে নিচ্ছে জাবের, আসরাফ, আজেম শেখরা। এদের থাকার কোনও জায়গা নেই। আমি বিডিও, সেচ দফতর, প্রধান সকলকে জানিয়েছি। প্রধান ছাড়া কেউ আসেননি এলাকায়।”
কামালপুরের আসলাম শেখ বলছেন, “গত এক বছরে অন্তত ৪০টি বাড়ি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। তাঁরা কোনও সরকারি সাহায্য পাননি। একটা ত্রিপল পর্যন্ত জোটেনি তাঁদের। কোথায় থাকবে, কী খাবে? সকলেই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। দিশেহারা অবস্থা এদের। যে ভাবে ভাঙন চলছে তাতে আশপাশের কোনও বাড়িই হয়ত আর থাকবে না। আতঙ্কে তাই একে একে সরে যেতে শুরু করেছেন সকলেই। সকলেরই চিন্তা এরপর কোথায় যাবেন।”
ঘর হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নুরুল। বলছেন, “৬ ফুট দূরে নদী। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়বে পাড়। তাই বাড়িতে থাকতে না পেরে পাশেই এক আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। কী করব ভেবেই পাচ্ছি না। আর কোথাও যাওয়ার মত এক ছটাক জায়গা নেই যে সেখানে গিয়ে বাড়ি করব।”
ফারুক বলছেন, “যে ভাবে ধস চলছে তাতে আশপাশের কোনও বাড়িই আর থাকবে না। ভয়ে তাই একে একে সরে যেতে শুরু করেছেন সকলেই। এরপর কোথায় যাব চিন্তা সেটাই।”
সেলিম শেখ বলছেন, “প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। অন্যদিকে নদীতে জল কমছে। ধসে পড়ছে পাড়। তড়িঘড়ি সব সামগ্রী সরাতে শুরু করি বাড়ি থেকে। কেউ একটা ত্রিপল নিয়ে এগিয়ে আসেনি। খাবার তো দূরের কথা।”
রঘুনাথগঞ্জ সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কল্পরূপ পাল বলছেন, “জল কমলে ভাঙন হবেই। স্পার বাঁধানোর কাজ শুরু না হলে এরকম ভাঙন হতেই থাকবে। বালির বস্তা ফেলে যতটুকু ঠেকানো যায় চেষ্টা হচ্ছে।”