Abandonment

চূর্ণী ও ইছামতীতে বিসর্জন, নির্দেশ মানা নিয়ে সংশয়

প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য বিকল্প হিসাবে স্থানীয় জলাশয়কে ব্যবহার করার কথা প্রশাসনিক ভাবে বলা হলেও, বাস্তবে তা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বেশিরভাগ পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:২৯
নদী বাঁচিয়ে কী ভাবে প্রতিমা নিরঞ্জন সম্ভব?

নদী বাঁচিয়ে কী ভাবে প্রতিমা নিরঞ্জন সম্ভব? —প্রতীকী ছবি।

'চূর্ণী ও ইছামতী নদীতে কোনও ভাবেই প্রতিমা নিরঞ্জন করা যাবে না'।

Advertisement

কালীপুজোর আগে রানাঘাট মহকুমা প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন ক্লাব, পুজো কমিটিগুলিকে এমনই বার্তা দেওয়া হয়েছিল। মূলত দূষণ আইনকে মান্যতা দিতে ও নদীর জল দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন।

প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য বিকল্প হিসাবে স্থানীয় জলাশয়কে ব্যবহার করার কথা প্রশাসনিক ভাবে বলা হলেও, বাস্তবে তা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বেশিরভাগ পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। কারণ বিসর্জনের জন্য পর্যাপ্ত পুকুর বা জলাশয় না থাকায় গত বছরের মতো এ বছরও রানাঘাট-১ ও ২ ব্লকের অধিকাংশ প্রতিমার নিরঞ্জন হচ্ছে চূর্ণী ও ইছামতী নদীতে।

রানাঘাট-২ ব্লকের অধীনে রয়েছে আড়ংঘাটা, যুগলকিশোর গ্রাম পঞ্চায়েত। এই দুই পঞ্চায়েত এলাকায় ছোট বড় শতাধিক কালীপুজো হয়। বিশেষ করে আড়ংঘাটা ফুটবল মাঠ ও রেল স্টেশন সংলগ্ন শিশু উদ্যানে কালীপুজোর পাশাপাশি মেলাও বসে। জেলার বাইরে থেকেও বহু মানুষ এখানে থিমের পুজোর টানে ভিড় জমান।

প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে আড়ংঘাটা তথা রানাঘাট মহকুমা এলাকার সমস্ত কালী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কী ভাবে সরকারি নির্দেশিকা মেনে নদী বাঁচিয়ে হবে বিসর্জন? এই প্রশ্নই তুলতে শুরু করেছেনপরিবেশ কর্মীরা।

অনেকেই বলছেন, আড়ংঘাটা ছাড়াও রানাঘাট-১ ব্লকের রামনগর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও একাধিক কালীপুজো হচ্ছে। সেখানকার পুজো উদ্যোক্তারাও চূর্ণী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেন। আসলে প্রশাসন নদী দূষণ ঠেকাতে নির্দেশিকার কথা বললেও বাস্তবে শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার মতো বিকল্প জলাশয় বা প্রতিমা নিরঞ্জনের পরিকাঠামো যুক্ত পাড় বাঁধানো পুকুর না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। আবার নদী বাঁচাতে গিয়ে এক কাট্টা হয়ে পুজো উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধেও যেতে পারছেন না পরিবেশ কর্মী কিংবা প্রশাসনের কর্তারা।

তাহলে নদী বাঁচিয়ে কী ভাবে প্রতিমা নিরঞ্জন সম্ভব?

আড়ংঘাটার একটি পুজো কমিটির সদস্য রতন রায় বলেন, "চূর্ণী নদীর দূষণ রোধে আমরাও সচেতন। সেজন্য প্রতিমা নিরঞ্জনের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার কাঠামো তুলে নেওয়া হবে। এছাড়া পুজোয় ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী ফেলার জন্য বিসর্জন ঘাটের পাশে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।" আড়ংঘাটা এলাকার বেশিরভাগ কালীপ্রতিমা চূর্ণী নদীর যুগল কিশোর মন্দিরের ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা বিসর্জনের পর তা সাথে সাথে নদী থেকে তুলে নেওয়ার জন্যও আড়ংঘাটা শ্যামা পুজো সমন্বয় কমিটি এ বছর বাড়তিসতর্কতা নিয়েছে।

প্রতিমা নিরঞ্জন নিয়ে আড়ংঘাটা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অম্লান ভট্টাচার্য বলেন, "ওই সমন্বয় কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেবে পঞ্চায়েতের তাতে সম্মতি রয়েছে।" কিন্তু আড়ংঘাটা এলাকা ছাড়াও একাধিক ঘাট থেকে চূর্ণী ও ইছামতী নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। সর্বত্রই নজরদারি চালানো যে সম্ভব নয় তাও স্বীকার করেছেনপ্রশাসনের কর্তারা।

এখন দেখার প্রশাসনের নির্দেশিকা, নদী দূষণ আইন আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হয়। দূষণ থেকে চূর্ণী ও ইছামতী নদীকে কতটাবাঁচানো সম্ভব!

আরও পড়ুন
Advertisement