মনোনয়ন জমার পরে তৃণমূল প্রার্থী ব্রজকিশোর গোস্বামীর সঙ্গে সায়নী ঘোষ। বৃহস্পতিবার রানাঘাটে। নিজস্ব চিত্র।
মনোনয়ন পর্বের প্রায় শেষ লগ্নে ঘোষিত হল শান্তিপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীর নাম। পুরনো মুখ, বর্তমানে দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন বিশ্বাসকে প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির।
শান্তিপুরের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল বুধবার রাত পর্যন্তও। সিপিএম এবং তৃণমূল যখন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে জোরকদমে প্রচারেও নেমে পড়েছে, সেই সময়েও কার্যত হাত গুটিয়েই বসে থাকতে হয়েছে বিজেপি শিবিরকে। অবশেষে মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার আগের দিন, বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্যের চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বিজেপি।
চার মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে শান্তিপুর আসনে ১৬ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু জয়ের পরেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার। তারই ফলে এই উপনির্বাচন। এ বার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে একাধিক নাম উঠে এসেছিল। ঘটনাচক্রে, প্রার্থী করা হল দলের অন্দরে জগন্নাথের বিরোধী শিবিরের লোক বলে পরিচিত নিরঞ্জনকে। চার মাস আগের নির্বাচনেও প্রার্থী পদের অন্যতম দাবিদার হিসাবে অন্যদের সঙ্গে নাম উঠেছিল নিরঞ্জনের। কিন্তু সাংসদকে প্রার্থী করে বিজেপি।
আগের নির্বাচনে জিতলেও বর্তমানে শান্তিপুরে খুব একটা স্বস্তিতে নেই বিজেপি। আগেই জগন্নাথকে এই উপনির্বাচনে দলের পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু কোন্দলের কাঁটা বিঁধে আছে অন্দরে। কিছু দিন আগেই দলের শহর মণ্ডলের সভাপতি বিপ্লব কর ইস্তফা দিয়েছেন সাংসদের দিকে আঙুল তুলে। পরের দিন তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জল্পনাও ছিল। তিনি যোগ না দিলেও সে দিন একাধিক বিজেপি কর্মী ও পদাধিকারী তৃণমূলে যোগ দেন।
এ দিন নিরঞ্জনের নাম ঘোষণার পরেই সমাজমাধ্যমে বিপ্লবের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ইঙ্গিতবাহী পোস্ট হয়, যাতে লেখা হয়, “আমি হারতে শিখিনি। নির্বাচনের আগেই জয়ী হয়েছি।” যদিও পরে তা মুছে দেওয়া হয়। তবে ইস্তফা দেওয়া থেকে এ দিন পর্যন্ত বারবার ফোন করে তাঁর মোবাইল বন্ধই পাওয়া গিয়েছে। আর জগন্নাথ এ দিন বলেন, “আমরা জিতব, দুশো শতাংশ আশাবাদী।”
জগন্নাথের জায়গায় যাঁকে লড়তে পাঠানো হল, কে সেই নিরঞ্জন?
দলীয় সূত্রের খবর, গ্রামীণ শান্তিপুরের বাবলা গ্রাম পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর পূর্ব দাসপাড়ার বাসিন্দা নিরঞ্জন নয়ের দশকের গোড়ার দিকে স্বয়ংসেবক হন। বছর পাঁচেক শান্তিপুর কলেজে এবিভিপি ইউনিট সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন। পরে বিজেপির বুথ সভাপতি, বাবলা অঞ্চল সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে দলের জেলা কমিটির সদস্য হন। দুই দফায় দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। বর্তমানেও সেই পদেই আছেন। মাঝে কিছুদিন ছিলেন নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি। নিরঞ্জন বলেন, “এখানকার মানুষ আগেও বিজেপির পাশেই ছিলেন। দলের সকলকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই।”
এ দিকে, বৃহস্পতিবারই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সিপিএমের সৌমেন মাহাতো এবং তৃণমূলের ব্রজকিশোর গোস্বামী। দলের দফতরে একটি কর্মিসভাও করেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। ছিলেন দলের প্রার্থী সহ এক ঝাঁক নেতানেত্রী। সিপিএমও আগেই জোরকদমে প্রচার শুরু করেছে। দেরিতে প্রার্থী ঘোষণা প্রসঙ্গে বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অশোক চক্রবর্তী দাবি করেন, “আমরা পরিকল্পিত ভাবেই নামছি। অন্যেরা পরিকল্পনাবিহীন ছোটাছুটি করছে। মানুষ আমাদের পাশেই থাকবেন।”