প্রতীকী ছবি।
কঠোর বিধি আলগা হতেই শিকেয় উঠেছে বিধি। যা দেখে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় সচেতন জেলাবাসী দরজায় আগল দিচ্ছেন কষে। আর প্রায় প্রতিদিনই খোঁজ নিচ্ছেন কোথায় কারা টিকা দিচ্ছেন কাদের? যেখান থেকে যেমন আশ্বাস মিলছে তেমন করে ক্যালেন্ডারে টিক দিচ্ছেন। তারিখ এলে আবার নিচ্ছেন খোঁজ। ফের আশ্বাসে পুরনো তারিখ কেটে নতুন তারিখে দিচ্ছেন টিক, অভ্যাসেই। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালেই একমাত্র রবিবার বাদে সপ্তাহে ছ’দিন টিকা দেওয়া হয়। সেন্ট জন অ্যাম্বুল্যান্স ও পুলিশ হাসপাতালে টিকা দেওয়া হচ্ছে সপ্তাহে তিন দিন। বহরমপুরের অনেক সাধারণ মানুষ যাঁরা কোনও পেশার সঙ্গে যুক্ত নয় কিংবা অগ্রাধিকার তালিকায় ঠাঁই হয়নি যাদের তাঁরা ওই তিন টিকা প্রদান কেন্দ্রে অন্তত বিশবার ঢুঁ মারছেন সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন।
সেখানেই সংগঠনের দাদা দিদি কিংবা চিকিৎসকদের একাংশকে তোষামদ করছেন একটিও ডোজ় যাতে পাওয়া যায় সেই ভরসায়। একে ওকে তাকে বলার সুবাদে কারও কারও ভাগ্যে টিকার একটি ডোজ়ের শিকেও ছিঁড়ছে। আর যাদের পরিচিত বলে কেউ নেই কিংবা যারা কাউকে অনুরোধ করতে সঙ্কোচ বোধ করছেন টিকা না পেয়ে তাঁরা ভয়ে আরও বেশি ঘরের মধ্যে সিঁধিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। ভয়ে ভয়ে যাতায়াত করছেন আনাজ বাজারে, ব্যাঙ্কে, অফিস আদালতে ভিড়ের মধ্যে মিশে।
সেন্ট জন অ্যাম্বুল্যান্সের পক্ষে অমলাংশু বিশ্বাস বলেন, “আমাদের এখানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই সোম আর মঙ্গল প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় দেওয়া হয় আর শনিবার দেওয়া হয় দ্বিতীয় ডোজ়। তবে সবটাই হচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশেই।” টিকা থাকলে ওই শিবির থেকে তিনদিনে দেড় হাজার থেকে দু’হাজার জন মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ডোজ় তুলনায় কম পায় লোকে। জুন মাসের ১৩ তারিখ থেকে তাঁরা এই প্রতিষেধক দেওয়ার শিবির করেছেন। তার মধ্যে এক সপ্তাহের তিন দিনেই কেবল প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হয়েছে। কিভাবে দেওয়া হয় টিকা? ওই সংগঠনের সম্পাদক অনুত্তম রায় বলেন, “আমরা কিছু নাম আগের থেকে নথিভুক্ত করে রেখেছি। তাদের কুপন দিচ্ছি। কুপন ছাড়াও যদি কেউ চলে আসেন টিকা থাকলে তাঁদেরও দিয়ে দিচ্ছি।” কিন্তু টিকা দেওয়ার শিবিরের খোঁজ মিলতেই সেখানে বেশি সংখ্যক লোক টিকা নিতে চলে আসলে মুশকিলে পড়তে হয় ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে তখন শলা পরামর্শ করে যতটা পারেন ততটা পাঠালে সদস্যরা তা ভিড় করে আসা মানুষজনকে দিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে এখনও পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি মানুষ ওই শিবির থেকে টিকা পেয়েছেন।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার অমিয় কুমার বেরা বলেন, “প্রশাসনিক ভবন থেকে দৈনিক যে নামের তালিকা পাঠানো হচ্ছে তাঁদেরই কেবল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতাল থেকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদের দেওয়া হচ্ছে না।” পুলিশ হাসপাতাল থেকে সপ্তাহে তিন দিন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস। তেমন জরুরি না হলে এখন অবশ্য প্রথম ডোজ় দেওয়া হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন টিকার দুটি ডোজ় নেওয়া হয়ে গেলে করোনার পরবর্তী ঢেউগুলোকে মোকাবিলা করা যাবে অনায়াসে। আনাজ বাজারের ভিড়ে করোনা সজ্জায় সজ্জিত হয়ে স্বর্ণময়ীর রেণুকা চৌধুরী স্পষ্ট কথায় জানতে চাইলেন “বলতে পারেন টিকার আকালে এ ভোগান্তি আর কদ্দিন?” উত্তর নেই কারও কাছে। অথচ গত মাসেই কেন্দ্র বলেছিল সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। ভাঁড়ার শূন্য তাই সবাইকে টিকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে পাল্টা জানিয়েছিল রাজ্য। মাস কাটতে চললেও রাজ্যের ভাঁড়ারে প্রতিষেধক বাড়ন্ত। ফলে এখনও সবার জন্য টিকা এ রাজ্যে বিশ বাঁও জলে।