প্রতীকী ছবি।
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের আবেদনপত্র হাতে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁদের প্রসঙ্গে ব্যবহার করেছেন ‘ভিখারির মতো’ শব্দবন্ধও। অথচ রাজ্য সরকারের ওই প্রকল্পে মাসে ৫০০ টাকা করে পেতে লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন করছেন বিজেপির বহু নেতা-কর্মী, এমনকি জনপ্রতিনিধিও। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। আবার দিলীপ ঘোষ রাজ্যবাসী ও মহিলাদের অপমান করেছেন দাবি করে বৃহস্পতিবার টিএমসিপি-র রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক রিয়াঙ্কা দাস ঘোষ শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন।
গত ১৬ অগস্ট থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির এ বার প্রধান আকর্ষণ লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প, যাতে ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সি মহিলাদের মাসে ৫০০ টাকা করে দেবে রাজ্য সরকার। তার জন্য আবেদন করতে রোজই শিবিরে হাজির হচ্ছেন হাজার-হাজার মহিলা। উপচে পড়ছে ভিড়। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেমন ‘স্বাস্থ্যসাথী’, আসন্ন পুরভোটের আগে এই প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে সুবিধা দিতে পারে। তাতে এতই সাড়া পড়েছে যে জনসংযোগে মরিয়া সিপিএমও শিবিরের কাছে চেয়ার-টেবিল পেতে সাধারণ মানুষের ফর্ম পূরণ করতে নেমেছে। উল্টো দিকে, রাজ্য বিজেপি নিয়েছে এই প্রকল্পকে হেয় করে দেখানোর পন্থা।
কিন্তু রাজ্য নেতৃ্ত্বের এই মনোভাব সত্ত্বেও বিজেপির মহিলা নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে জন্য আবেদন করছেন। চকদিগনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির সদস্য সুজাতা সাহা থেকে শুরু করে ভীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য পুর্ণিমা হালদার— নদিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একই চিত্র। আবেদন জমা দিয়েছেন কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য বরুণ ঘোষের স্ত্রীও।
রানাঘাট ১ ব্লকের রামনগর ১ পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য অনিতা দেবনাথ নিজেই এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছেন। তাঁর স্বামী শিবু দেবনাথের বক্তব্য, “সরকারি প্রকল্পে সাধারণ নাগরিক যে কেউ আবেদন করতে পারে। দলের তরফে কোনও নিষেধাজ্ঞাও নেই।” কিন্তু দলের রাজ্য সভাপতি এই আবেদন ‘ভিখিরির মতো’ বলে কটাক্ষ করেছেন? শিবুর যুক্তি, “উনি রাজনৈতিক জায়গা থেকে সমালোচনা করেছেন। রাজ্য সরকার কর্মসংস্থান দিতে পারছে না, পরিষেবা দিতে পারছে না— সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন।”
জেলার তৃণমূলের একাংশের দাবি, বিজেপির নিচুতলার অনেকেই যাঁরা কোনও পদে নেই বা সাধারণ কর্মী, তাঁদের পরিবারের মহিলারা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন করছেন। মাসে ৫০০ টাকার এই প্রকল্প প্রসঙ্গে কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য বরুণ ঘোষ বলছেন, “এত কম টাকা দেওয়াটা কোনও কাজের কথা নয়। কিন্তু বাড়ির মহিলারা সে সব কথা শুনতে চাইছেন না।” চকদিকনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য সুজাতা সাহা বলছেন, “দল থেকে এই টাকা না নেওয়ার জন্য কোনও নির্দেশ আসেনি। তাই আবেদন করেছি।”
এ প্রসঙ্গে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদারের দাবি, “দিলীপবাবু ঠিক কী বলেছেন, আমার জানা নেই। হয়ত তাঁর বক্তব্য বিকৃত করা হচ্ছে।” তাঁর মতে, “এটা তৃণমূলের নয়, রাজ্য সরকারের প্রকল্প। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার অধিকার সকলের আছে। তৃণমূলে নেতাকর্মীরাও যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা নেন।” রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের মতে, “সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে সব নাগরিক আবেদন করতে পারেন। আর আমাদের রাজ্য সভাপতি কাউকে ভিখারি বলেননি। তৃণমূল সরকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে অনুদান দিয়ে মানুষকে ভোলাচ্ছে, এটাই উনি বোঝাতে চেয়েছেন।”
তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জয়ন্ত সাহা পাল্টা বলেন, “করোনাকালে কাজ হারানো পরিবারগুলি জানে, মাসে ৫০০ টাকার গুরুত্ব কত। গুরুত্ব আছে বলেই তো বিজেপির লোকেরা দলে দলে লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য আবেদন করছেন। এতে প্রমাণিত, দিলীপবাবুর দলের লোকেরাই তাঁর কথায় গুরুত্ব দেন না।”