প্রতীকী চিত্র।
বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর রেলকে আঁকড়ে ধরে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বিজেপি। নদিয়ার উত্তর অংশে এক মাত্র কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রটি ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রেই পরাজিত হয়েছে তারা। ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে বিজেপি বিস্তীর্ণ এলাকায় রেলের দাবিই সামনে আনতে চাইছে।
নদিয়ার উত্তর অংশে কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার কোনও রেললাইন নেই। প্রতি বারই ভোটের আগে রেলের বিষয়টি চর্চায় আসে। আর ভোট মিটে গেলেই জনপ্রতিনিধিরা ভুলে যান সেই সব প্রতিশ্রুতি। জমিজটে বেশ কয়েক বছর আটকে আছে কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপ ঘাট পর্যন্ত রেললাইন তৈরির কাজও। এই রেলপথ চালু হলে বনগাঁ থেকে সরাসরি উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হত।
জমি দখলমুক্ত করা ও অধিগ্রহণ নিয়ে বহু দিন ধরেই বাম, তৃণমূল ও বিজেপির টানাপড়েন চলছে। রানাঘাটের সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর এই রেললাইন নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন বিজেপির জগন্নাথ সরকার। রেলের কর্তারা একাধিক বার এসে গোটা বিষয়টি সরজমিন দেখেও যান। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আমঘাটা থেকে রেললাইন এক ইঞ্চিও বাড়ে নি।
পাশাপাশি, কৃষ্ণনগর স্টেশন সংলগ্ন বেলেডাঙা রেলগেটে একটি ফ্লাইওভারের দাবিও দীর্ঘদিনের। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে শহরে ঢোকার এটাই প্রধান রাস্তা। জেলার বহু মানুষকে এই রাস্তা দিয়েই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে যেতে হয়। অথচ সারা দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেট পড়ে থাকায় আটকে থাকতে হয় যাত্রী এমনকি রোগীদেরও। ধুবুলিয়া স্টেশনেও একটি ওভারব্রিজের দাবি রয়েছে। এ বার এই সমস্ত দাবি সামনে এনেই উত্তরের মানুষের কাছে ফিরতে চাইছে বিজেপি।
শনিবার ধুবুলিয়ার হাঁসাডাঙা এলাকায় বিজেপির উত্তর সাংগঠনিক জেলার অষ্টম কার্যকারিণী সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিধানসভা ভোটের পর এই প্রথম। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্যরা। সেখানে রাজনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বিজেপির প্রতীকে জিতে মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এলাকার ভোটারদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনাও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে ভোটের পর বিজেপির নেতা ও কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগও তোলা হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এলাকার মানুষের রেলের উদ্যোগে। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে জেলা কমিটির পক্ষে থেকে ওই চারটি বিষয় নিয়ে দাবি জানানো হবে।
বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদার বলেন, “আমরা তো দলের মাধ্যমে রেল মন্ত্রকের কাছে দাবি জানাবই। সেই সঙ্গে মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে এক মাত্র আমাদের সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ছাড়া কোনও সাংসদ এই দাবিগুলি সংসদে তুলে ধরেননি।” বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের বক্তব্য, “রেললাইন পাতার জমি দখলমুক্ত করে অধিগ্রহণের কাজ রাজ্য সরকারের। ফ্লাইওভার তৈরির জন্য অতিরিক্ত জমির ব্যবস্থা করাও তাদেরই দায়িত্ব। কিন্তু রাজ্যের তরফে সামান্যতম সদিচ্ছা না থাকায় রেলের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।”
যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায়ের পাল্টা বক্তব্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপ ব্রডগেজ রেললাইন তৈরির কাজ চালু করে দিয়েছিলেন। করিমপুর পর্যন্ত রেলপথ তৈরির জন্যও উদ্যোগী হন তিনি। মোদী সরকার আসার পর সব জলে গিয়েছে। তেন্দ্রের সদিচ্ছা থাকলে রাজ্যের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনাটুকু অন্তত করত।”