রবীন্দ্র সদনে শিল্পের সমাধান কর্মসূচি উদ্বোধন। নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে জেলাস্তরের শিল্পের সমাধান কর্মসূচিতে শিল্পোদ্যোগীদের তরফে বলা হল, তাঁরা চান জেলায় ছোট ছোট শিল্প হোক। কিন্তু সেই শিল্পের জন্য ঋণের প্রয়োজন। উদ্যোগীরা ব্যাঙ্কে ঋণ নিতে যাচ্ছেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক নানা অজুহাতে তাঁদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। যার জেরে শিল্প করতে গিয়ে উদ্যোগীরা হোচট খাচ্ছেন। শুক্রবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে জেলা স্তরের শিল্পের সমাধান কর্মসূচিতে এ ভাবে অসহযোগিতার অভিযোগ তুললেন মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার্ব অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার ভট্টাচার্য। তবে লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার সানি কুমার বলেছেন, ‘‘ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দেওয়ার জন্য বসে রয়েছে। তার জন্য ঠিক মতো প্রজেক্ট করতে হবে, বিনিয়োগের পরে অর্থ ফেরত কীভাবে হবে তা দেখাতে হবে, সিভিল স্কোর ভাল থাকা চাই। সে সব দেখে ঋণ দেওয়া হয়।’’
অধিকাংশ ব্লকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট অফিসার না থাকায় উদ্যোগীদের হয়রান হতে হচ্ছে বলে স্বপনবাবু অভিযোগ তুলেছেন। স্বপনের অভিযোগ, ‘‘জেলার ২৬টি ব্লকের মধ্যে ১৯টি ব্লকে এবং জেলা শিল্প কেন্দ্রের ৯টির মধ্যে ৪ টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজারের পদ শূন্য এক বছর থেকে। জেলা শিল্প কেন্দ্রের এই হাল হলে শিল্পের উন্নয়ন হবে কী করে? আগে এই সব শূন্য পদ পূরণ করা হোক।’’ তাঁর দাবি, ‘‘২০২৩ সাল থেকে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড চালু হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষকে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে। আর এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫২৯ জন ঋণ পেয়েছেন। এই তথ্য বলে দিচ্ছে ব্যাঙ্ক ঠিক মতো ঋণ দিচ্ছে না। জেলায় শিল্পের জোয়ার আনতে সরকার, প্রশাসন চেষ্টা করছে। কিন্তু শিল্পের জোয়ার আনতে হলে উদ্যোগীদের ঋণদানের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিকে উদার হতে হবে।’’ তবে লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগ উড়িয়ে দেন। সেই সঙ্গে ঋণ কীভাবে মিলবে তার ব্যাখ্যাও দেন।
গত ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোগ ও বস্ত্র দফতর রাজ্য জুড়ে ব্লক ও পুরসভা স্তরে শিল্পের সমাধান নামে একটি কর্মসূচি নিয়েছে। ব্লক ও পুরস্তরের শিল্পের সমাধান কর্মসূচি শেষে শুক্রবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে জেলা স্তরের শিল্পের সমাধান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। জেলার বিভিন্ন এলাকার শ’পাঁচেক উদ্যোগী এসেছিলেন। এ দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা, জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) মহম্মদ সামসুর রহমান, আনন্দধারা প্রকল্পের জেলার অধিকর্তা সুকান্ত সাহা সহ অনেকে।
সেখানে জেলাশাসকও বলেন, ‘‘ঋণ অনেক সময় আটকে যায়। তবে অযৌক্তিক ভাবে আটকে যায় এমন না। ওরা (ব্যাঙ্ক) লাভ দেখবে। ঋণ পরিশোধের উপরে, সিভিল স্কোরের উপরে ঋণ দেওয়া হয়।’’ ব্যাঙ্কারদের উদ্দেশে জেলাশাসক বলেন, ‘‘সিভিল শূন্য বা মাইনাস এক হলে তাঁকে কিন্তু ঋণ দেওয়া আপনার ডিউটি। সিভিল শূন্য বা মাইনাস ১-এর ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার জন্য মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে।’’