—প্রতীকী চিত্র।
উৎসবের মরসুমে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কি দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে? বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ইলিশ রফতানি আপাতত নিষিদ্ধ করার নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ নেই। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাই একমাত্র কারণ। তবে ভারত থেকে ডিম আমদানির পরে আলু এবং পেঁয়াজ রফতানি স্বাভাবিক রাখার আর্জি জানাল মুহাম্মদ ইউনূস সরকার। ঢাকা থেকে বাংলাদেশের মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গবাসীকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা। কিন্তু দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে এ বার ও পার বাংলায় ইলিশ পাঠাতে পারব না আমরা।’’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এ বার পদ্মার ইলিশ ঢুকছে না পশ্চিমবঙ্গে। তবে রাজ্য থেকে বাংলাদেশে মুরগির ডিম রফতানি হয়েছে। তার পর সে দেশে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে ‘মধ্যবিত্তের প্রোটিন’। অন্য দিকে, অভ্যন্তরীণ চাহিদার কথা মাথায় রেখে বাংলা থেকে ভিন্রাজ্যে আলু রফতানি আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। যদিও ইলিশ ‘ইস্যু’তে ভারতের ক্ষোভের কথা মাথায় রেখেও আগাম দুঃখপ্রকাশ করে আলু-পেঁয়াজ রফতানি স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ জানাল ইউনূস সরকার। পাশাপাশি তাদের দাবি, ইলিশের মতো ‘ক্ষুদ্র ইস্যু’ ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলবে না।
বাংলাদেশের বাজারে প্রতি কেজি আলুর বর্তমান মূল্য কমবেশি ৭০ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। পূর্বতন হাসিনা সরকারের সময়ে আলুর দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকার আশপাশে। তখনও পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি পার করেনি। এর মধ্যে বাংলাদেশের আড়তদারদের নিয়ে বৈঠকে দেশীয় বাজারে আলু-পেঁয়াজের দাম সম্পূর্ণ ভাবে ভারত থেকে আমদানি নির্ভর বলে মতপ্রকাশ করে সে দেশের ব্যবসায়ী মহল। আলোচনার পর ভারত থেকে আলু-পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে একটি সূত্রের খবর। তবে ডিম, আলু এবং পেঁয়াজের জন্য ভারতের মুখাপেক্ষী হলেও উৎসবের মরসুমে ভারতে ইলিশ রফতানির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেনি বর্তমান ইউনূস সরকার। হাসিনার আমলে দুর্গাপুজোর সময়ে ইলিশ পাঠানোর বিষয়টি তুলে ধরে ভারতের ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘পদ্মার ইলিশ বিশ্বসেরা। স্বাদে উৎকৃষ্ট একটি মাছ। কিন্তু বর্ধিত দামের কারণে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে ইলিশ। আমি যখন দায়িত্ব পেলাম, আমার প্রধান লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রত্যেকের কাছে ইলিশকে ক্রয়সাধ্য করে তোলা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘শুধু ভারত নয়, কোনও দেশেই ইলিশ পাঠাচ্ছি না আমরা। এ বার ১২ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরাও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।’’ ফরিদা এ-ও জানান, বাংলাদেশে এখন ইলিশের জোগান কম। এখন ইলিশ রফতানি হলে দেশের বাজারে ঘাটতি দেখা যাবে। সেটা তাঁরা চান না। তিনি বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করেও এখনও পর্যন্ত এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম হাজার টাকার মধ্যে আনতে পারিনি। এই অবস্থায় আমাদের অক্ষমতা স্বীকার করে ভারত এবং বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি।’’
এর মধ্যে ভারত থেকে দ্রুত আলু আমদানি করতে মোট দশ জনকে ‘ইমপোর্ট পারমিট’ (আইপি) দিয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সরকার। গত শুক্রবার লিখিত ভাবে এই তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশের হিলি স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কর্মকর্তা ইউসুফ আলি। তিনি জানান, দেশের বাজারে আলুর দাম স্বাভাবিক রাখতে বন্দরের ১০ জন ব্যবসায়ীকে আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগেই ওই ব্যবসায়ীরা আইপি-র আবেদন করেছিলেন। বাংলাদেশের অন্যতম আলু আমদানিকারক সংস্থার এক কর্তা আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, সে দেশের বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে আমদানি ছাড়া বিকল্প পথ নেই। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের উচিত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। ভারত থেকে আলু আমদানি হলে দেশের বাজারে দাম অনেকটাই কমে আসবে, এ নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।’’