তাহেরপুরে ফিরে মেয়ে কোলে সুপ্রিয় ধর। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
তালিবানদের হাত থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছেন, কিন্তু এখন পেট চালাতে কী ভাবে কাজ জোগাড় করবেন সেই চিন্তায় দিশেবারা পিটার মণ্ডল।
বছর দু’য়েক আগে আফগানিস্তানের কাবুলে মার্কিন সেনা ছাউনিতে খাবার সরবরাহের চাকরি নিয়ে গিয়েছিলেন তেহট্টের হাউলিয়ার পিটার মণ্ডল। ১৫ই অগস্ট থেকে কাবুলের পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। তালিবানদের হাত থেকে বেঁচে মার্কিন দূতাবাসের সাহায্যে আমেরিকান কার্গো বিমানে কয়েকদিন আগেই কাতারে পৌঁছেছিলেন। সোমবার ভোরে সেখান থেকে বিমানে আসেন দিল্লি। মঙ্গলবার ভোরে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে গাড়়িতে তেহট্টের বাড়িতে ফেরেন। বাবা ঘরে ফেরায় আনন্দে আত্মহারা তিন মেয়ে। স্ব্স্তিতে স্ত্রীও। কিন্তু উদ্বেগ কাটছে না পিটারের।
চিন্তাটা অর্থ উপার্জনের। বাড়িতে এতগুলো লোক। চাকরিতে কবে ফিরতে পারবেন, আদৌ আর পারবেন কিনা জানা নেই। এখন নতুন করে কাজের সন্ধান করতে হবে। তার উপর করোনাকালে এমনিতেই চাকরির বাজার অত্যন্ত খারাপ। সব মিলিয়ে বিভ্রান্ত দশা পিটারের।
বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরে ভাল লাগছে। কিন্তু এ বার সংসার চালাতে তোকাজের প্রয়োজন। সরকার কাজ দেবে কিনা তা জানা নেই।” তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা বলেন, “কী ভাবে ওই পরিবারকে সাহায্য করা যায় সে ব্যাপারে উপর মহলের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
আফগানিস্তান থেকেই সোমবার রাতে বাড়ি ফিরেছেন তাহেরপুরের বাসিন্দা সুপ্রিয় ধর, হরিদাস বিশ্বাস, অভিজিৎ নাগ, বিশ্বজিৎ দেবনাথ এবং রানাঘাট বেগোপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় ডমিনিক মণ্ডল। কাবুলে পাঁচ বছর ধরে ন্যাটো সেনা শিবিরে রান্নার কাজে যুক্ত ছিলেন সুপ্রিয়। তালিবান সে দেশে ক্ষমতা দখলের পর ফেরার আশা এক রকম ছেড়ে দিয়েছিলেন। গোলমালের কারণে ভিসার জন্য জমা দেওয়া পাসপোর্টও আটকে যায়। শেষে মোবাইলে থাকা পাসপোর্টের ছবি থেকে তাঁদের হোয়াইট পাসপোর্ট করে দেওয়া হয়। সেই পাসপোর্টের সাহায্যেই ফিরতে পেরেছেন।
তাহেরপুর শহরের বি ব্লকের বাসিন্দা সুপ্রিয়র স্ত্রী এবং ন’ বছরের মেয়ে রয়েছে। বাড়ি ফেরার পর বলেন, ‘‘সেনা ছাউনির বাইরে বের হইনি। কিন্তু জানালা দিয়ে দেখেছি গুলি চলছে ,বোমা পড়়ছে। ভাগ্যিস আমাদের কাছে পার্সপোর্টের জেরক্স কপি আর ছবি ছিল।’’
সোমবার রাতেই রানাঘাট বেগোপাড়ার বাড়িতে ফিরেছেন সঞ্জয় ডমিনিক মণ্ডল। তিনিও কাবুলে বিমানবন্দরের পাশে সেনা ছাউনিতে থাকতেন। কাতার ও দিল্লি হয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন। বাড়িতে স্ত্রী, কিশোর পুত্র, মা, বাবা, দাদা-বৌদি রয়েছেন। প্রায় দু বছর পর ঘরের ছেলেকে ঘরে পেয়ে সকলেই আত্মহারা।