Jagadhatri Puja 2023

রাজবাড়ি থেকে ১৫ টাকা এলে তবেই শুরু হয় পুজো, কৃষ্ণনগরের এই জগদ্ধাত্রী আরাধনার বিশেষত্ব ধুনো!

এক সময় ১৫ টাকার মূল্য ছিল অনেক। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রসারে এবং রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরীকে জলঙ্গি নদীতে ভাসানের সময় মালো সম্প্রদায়ের মানুষদের সাহায্য করতে এই অর্থ দিতেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৫৫
Jagadhatri

এ বার এক মণ ধুনো দেওয়া হবে এই জগদ্ধাত্রী পুজোয়। —নিজস্ব চিত্র।

মালো, অর্থাৎ জেলেরা রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের জগদ্ধাত্রী পুজোয় প্রতিমা নিরঞ্জনের কাজটি করতেন। এক সময় তাঁদেরও ইচ্ছা হল জগদ্ধাত্রী পুজো করার। রাজা মেনেও নিলেন সেটা। কিন্তু পুজোর খরচ দেবে কে? রাজা কৃষ্ণচন্দ্রই মালোদের ১৫ টাকা অনুদান দেন। সেই রেওয়াজ থেকে গিয়েছে। আজও রাজবাড়ি থেকে যায় ১৫ টাকা। এই টাকা না এলে মালোপাড়ার বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজোর কাজ শুরুই হয় না। কথিত, এক বার জেলেপাড়ায় পুজো দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। কিন্তু মাছের তীব্র আঁশটে গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন রাজা। সেই গন্ধ ঢাকতে পোড়ানো হয় প্রচুর ধুনো। সেই রীতি মেনে এখনও পোড়ানো হয় এক মণ ধুনো। এখনও নদিয়ার কৃষ্ণনগরের মালোপাড়ার মা জলেশ্বরীর পুজোর জল আনতে পুরুষরা শাড়ি পরে ঘাটে যান।

Advertisement

এখন আর ১৫ টাকায় কী হয়! কিছুই নয়। তবে এক সময় ওই অর্থের মূল্য ছিল অনেক। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রসারে এবং রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরীকে জলঙ্গি নদীতে ভাসানের সময় মালোদের সাহায্য করতে এই অর্থ দিতেন।

মালোপাড়ার পুজোর ইতিহাস বলতে গিয়ে এই কাহিনি শোনান পুজো কমিটির কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, কৃষ্ণনগরের প্রাচীন পুজোগুলির অন্যতম মালোপাড়ার পুজোটি। জোড়া নৌকার মাঝখানে রাজবাড়ির আরাধ্যা রাজরাজেশ্বরীকে রেখে এক অদ্ভুত কায়দায় মালোরা দেবীকে ভাসান দিতেন। এ ভাবে দীর্ঘ দিন চলে। পরে এলাকার মৎস্যজীবীরা তাঁদের পাড়ায় জগদ্ধাত্রী পুজো করার জন্য রাজার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। রাজাও পুজোর প্রচারে এবং অনুগত প্রজাদের কথা রাখতে আরাধনার অনুমতি দেন। রাজবাড়ি থেকে প্রতিমার কাঠামো তৈরির কাঠ এবং পুজোর খরচের জন্য দিতেন ১৫ টাকা। আজও সেই ধারা অব্যাহত।

পুজো কমিটির কর্তাদের দাবি, এক সময় মালোপাড়ার পুজো দেখতে রাজা নিজে আসতেন। কিন্তু মাছের তীব্র আঁশটে গন্ধে রাজার অসুবিধা যাতে না হয়, সেই ভাবনা থেকেই মালোপাড়ার পুজোয় ধুনো পোড়ানোর চল শুরু হয়। সেই ধুনো দেওয়াই এখন এই পুজোর বিশেষ আকর্ষণ। কারও মানসিক থাকলে মাথার উপর মালসায় ধুনো রেখে পোড়ানো হয়।

মালোপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজোর আরও একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, ‘জল সাজা’। পুজোর সঙ্গে জড়িত পুরুষেরা শাড়ি পরে জল সাজতে যান ধুনো পোড়ানোর পর। একমাত্র মা জলেশ্বরীর শোভাযাত্রাতেই থাকে কার্বাইড গ্যাসের বাতি। বিসর্জনে কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যবাহী ‘সাং’ প্রথায় অর্থাৎ বাঁশের ডুলিতে প্রতিমাকে ঝুলিয়ে নিয়ে না গিয়ে গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। আর মায়ের বাহন সিংহের লেজের কাছে এখনও শোভা পায় রাজার দেওয়া সোনার মোহর। পুজো কমিটির সম্পাদক শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘ভক্তদের মানত করা ধুনো পোড়ানো হয়। এ বারও প্রায় এক মণ ধুনো পোড়ানো হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement