Bangladeshi Old Man

নাতিকে দেশে ফেরাতে ভারতে বাংলাদেশি বৃদ্ধ

সম্প্রতি সমাজ মাধ্যমে নাতির গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা জানতে পারেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহের বাসিন্দা বৃদ্ধ আবুল হোসেন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৫
আবুল হোসেন।

আবুল হোসেন। —নিজস্ব চিত্র।

দাদু-নাতির সম্পর্কের কাছে সীমান্তের কাঁটাতার যে তুচ্ছ, তার প্রমাণ আগেই মিলেছিল। ২০২১ সালের জুলাই মাসে বছর বারোর নয়ন আলি সীমান্তের কাঁটাতার পেরিরে বাংলাদেশ থেকে পৌঁছে গিয়েছিল মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থানার বাজিতপুরে। উদ্দেশ্য ছিল দাদুর সঙ্গে দেখা করা।

Advertisement

এ বার অভিমানে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে এ দেশে চলে আসা যুবককে আইনি বেড়াজাল থেকে উদ্ধার করতে বাংলাদেশ থেকে রানাঘাটে এলেন বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধ আবুল হোসেন। উদ্দেশ্য, নাতিকে নিয়ে দেশে ফিরবেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ জুলাই রাতে ধানতলা থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বরণবেড়িয়া থেকে আটক করা হয় বছর পাঁচিশের যুবক সুইত রহমানকে। অনুপ্রবেশকারী হিসেবে তাঁকে গ্রেফতার করে ধানতলা থানার পুলিশ। বর্তমানে ওই বাংলাদেশি যুবকের স্থান হয়েছে রানাঘাট উপ-সংশোধনাগারে।

সম্প্রতি সমাজ মাধ্যমে নাতি গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা জানতে পারেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহের বাসিন্দা বৃদ্ধ আবুল হোসেন। এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করেননি বৃদ্ধ। নাতিকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে প্রথমে পাসপোর্ট, তার পর ভিসার অনুমতি নিয়ে গত সোমবার রাতে গেদে সীমান্ত হয়ে এ দেশের মাটিতে পা রাখেন তিনি। মঙ্গলবার ভোরের আলো ফুটতেই বৃদ্ধ সটান চলে আসেন রানাঘাট আদালতে।

অচেনা দেশ, অচেনা মানুষজন। এতটুকুও ভয় না পেয়ে চোয়াল শক্ত করে আদালতের আইনজীবীদের পরামর্শ নেন তিনি। বৃদ্ধ বলেন, "ওই সুইত আমার ভাইগ্নার পোলা। ছোটবেলায় ও বাপেরে হারাইছে। ওই দ্যাশে কাজ-কাম নাই। মায়ের লগে অশান্তি কইরা রাগে দ্যাশ ছাড়সে। ওরে দ্যাশে ফিরাইতেই আমি বাংলাদেশ দিয়া এইহানে আইছি।" বৃদ্ধের দৃঢ় সংকল্প, "ওরে আমি দ্যাশে ফিরামুই।"

নড়বড়ে অশক্ত শরীর। বৃদ্ধের সংকল্পে অভিভূত আইনজীবীদের অনেকেই। এ দিন আদালত চত্বরেও বৃদ্ধের উপস্থিতির ও নাতির টানে এ দেশে চলে আসার বিষয়টিকে কুর্নিশ জানান তাঁরা। অনেকেই বলছেন, এ যেন চলচ্চিত্রের বাস্তবায়ন। জানা গিয়েছে, আগামী ৩০ অগস্ট ধৃত বাংলাদেশি যুবক সুইতকে আদালতে তোলা হবে। আইনি জটিলতার বাধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত নাতির হাত শক্ত করে ধরতে পারবেন কি না দাদু, সেই আশাতেই দিন গুনছেন আবুল হোসেন।

মুর্শিদাবাদ রঘুনাথগঞ্জে দাদুর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশ ফেরার পথে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছিল বালক নয়ন আলি। ওই সময় নয়নের দাদুর প্রতি ভালবাসা কথা শুনে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাধ্য হয়েছিল বালককে বাংলাদেশ ফেরাতে। এ ক্ষেত্রে নাতিকে দেশে ফেরাতে কতটা ঝক্কি পোহাতে হবে আবুল হোসেনকে? সময় তার উত্তর দেবে।

আরও পড়ুন
Advertisement