পিএসই-র চেয়ারম্যান মুকুল রায়। —ফাইল চিত্র।
প্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্য বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)-র চেয়ারম্যান হলেন মুকুল রায়। শুক্রবার বিধানসভার অধিবেশন শেষে তাঁর নাম ঘোষণা করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুকুলের নাম ঘোষণা করতেই প্রতিবাদে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যান বিরোধী শিবিরের বিধায়করা। তার পর সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভ উগরে দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, সাধারণত বিরোধী দল থেকেই পিএসি-র চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু ক্ষমতার জোরে সেই রীতি ভঙ্গ করেছে তৃণমূল। বিজেপি-র কোনও বিধায়ক মুকুল রায়ের নাম প্রস্তাব করেননি। যদিও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সদস্য, এক জন নির্দল প্রার্থী মুকুলের নাম সুপারিশ করেন। এগরার তৃণমূল বিধায়ক মুকুলের নাম সমর্থন করেন।
ভোটপর্ব মিটতেই, গত ১১ জুন বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরে আসেন সপুত্র মুকুল। তখনই তাঁকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল জোড়াফুল শিবিরই। সেই সময় আনন্দবাজার অনলাইনই জানিয়েছিল, মুকুলের পিএসই-র চেয়ারম্যান হওয়া শুধু ঘোষণার অপেক্ষা। তার পরই গত ২৩ জুন পিএসি সদস্যপদের জন্য মনোনয়ন জমা দেন মুকুল। তার পরেই শুক্রবার স্পিকার আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর নিযুক্তির ঘোষণা করেন। স্পিকার জানান, রাজনীতিতে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা মুকুলের। সংসদেও অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। সব কিছু বিবেচনা করে তাই তাঁকেই পিএসি-র চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু শনিবার মুকুলের নাম ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষোভ উগরে দেন বিজেপি বিধায়করা। অধিবেশন ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। এর পর সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘অধিবেশনে বিরোধী দলকে কোনও কথা বলারই সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিরোধী দল থেকেই পিএসি-র চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন বলে দীর্ঘ দিন ধরে দেখে আসছি। ভারতের সব বিধানসভা এমনকি লোকসভাতেও এই রীতি মেনেই চলা হয়। সরকারের খরচ করার অধিকার কতটা, তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করা দায়িত্ব বিরোধীপক্ষের। গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় এমনই ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শাসকদল এবং অধ্যক্ষ ক্ষমতার বলে এই চিরাচরিত রীতি ভাঙলেন।’’
মনোনয়ন নিয়ে স্পিকার সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না বলেও দাবি করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ মহোদয় বললেন, পিএসি-র ২০ জন সদস্যের মধ্যে বিরোধী শিবির থেকে ৭ জন নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু পিএসি-র সদস্যদের মধ্যে ৬ জন বিরোধী পক্ষের হয়, ১৪ জন হয় শাসক পক্ষ থেকে। সংখ্যার ভিত্তিতে সবটা ঠিক হয়। আমাদের ৬ জনের মধ্যে মুকুল রায়ের নাম ছিল না। তাঁর মনোনয়নের পক্ষে প্রস্তাব দেন তৃণমূলের সহযোগী দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কালিম্পংয়ের বিধায়ক। সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন এগরায় তৃণমূলের নির্বাচিত বিধায়ক। বিজেপি-র কেউ ওঁকে সমর্থন করেননি। তাই ৭ জন নয়, ৬ জনই মনোনয়ন দেন। মুকুল রায়কে পিএসই-র চেয়ারম্যান মাননীয় অধ্যক্ষ তাঁর ক্ষমতা বলে করেছেন, পুরনো সমস্ত রীতি-নীতি, ঐতিহ্য ভেঙে।’’
তবে শুভেন্দু আপত্তি তুললেও, সংসদীয় এবং পরিষদীয় রাজনীতিতে স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের যুক্তি, ‘এ ক্ষেত্রে প্রতিবাদ জানানো ছাড়া কিছু করা সম্ভব নয় বিরোধীদের। চাইসে আদালেত যেতেই াপরে তারা। তবে বিধানসভায় স্পিকারই সর্বময়কর্তা। আদালতও অব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।