ছবি : সংগৃহীত।
নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখে ৪৯-এ পড়বেন সুস্মিতা সেন। ১৯ বছরের যে বাঙালি তরুণী গালে টোল ফেলা হাসি আর রাখঢাকহীন আবেগ দেখিয়ে গোটা বিশ্বের মন কেড়ে নিয়েছিলেন, তিনি আজও তাঁকে ঘিরে সেই একই রকম ভাললাগার রেশ রেখে দিতে পেরেছেন। মাঝের ৩০ বছরে আরও বেশি পরিণত হয়েছেন। কিন্তু তাতে সুস্মিতাকে ঘিরে ভক্তদের মুগ্ধতায় টোল পড়েনি। বরং তাঁরা অবাক হয়েছেন দেখে, বহু দিন পর্দার বাইরে থাকার পরও একেবারে নতুন যুগের ওটিটি সিরিজ়ে সুস্মিতা কী ভাবে সমস্ত আলোটুকু নিজের দিকে কেড়ে নিতে পারেন। মুগ্ধ হয়েছেন ভেবে, কী ভাবে এখনও প্রায়শই পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই সুস্মিতা অদ্ভুত সব শারীরিক কসরত করতে পারেন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তার ছবি, ভিডিয়ো পোস্ট করতে পারেন! পর্দায় দেখাতে পারেন অবিশ্বাস্য সব ‘স্টান্টবাজি’!
সত্যিই কী ভাবে পারেন সুস্মিতা? অদ্ভুত ভাবে এ ব্যাপারে সুস্মিতার সঙ্গে তাঁর এককালের সহ-অভিনেতা শাহরুখ খানের মিল রয়েছে। সাফল্যের কথা জানতে চাইলেই শাহরুখ বলেন, সাফল্যের একটিই ফর্মুলা তাঁর জানা আছে। আর সেটা হল কঠোর পরিশ্রম। সুস্মিতার ফিটনেস প্রশিক্ষক বলছেন, সুস্মিতাও ফিট থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। তাঁর অধ্যবসায় দেখে মাঝেমধ্যে মুগ্ধ হয়ে যান প্রশিক্ষক নুপূর শিখরেও। তিনিই জানিয়েছেন, সুস্মিতার ফিটনেস রুটিন।
এক আন্তর্জাতিক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নুপূর বলেছেন, ‘‘প্রতি সপ্তাহে নিজের বাড়ির জিমে অন্তত চারটি ‘সেশন’ করেন সুস্মিতা। প্রত্যেকটি ‘সেশন’ হয় দু’ঘণ্টা করে। আজ পর্যন্ত কোনও দিন সুস্মিতাকে ওই চারটে ‘সেশন’ মিস করতে দেখিনি।’’ নুপূর জানিয়েছেন, সুস্মিতা এখন মন দিয়েছেন তাঁর শরীরের ওজন আর পেশির নমনীয়তার দিকে। এ ছাড়া কোর মাসল, অর্থাৎ পেট, ছাতি, কোমর, কোমরের নীচের অংশ, তলপেট এবং উরুর সন্ধির পেশি মজবুত করার এক্সারসাইজ়ও করেন নিয়মিত। নুপূর জানিয়েছেন, সুস্মিতা বরাবর পেশি সচল রাখার ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। এ ব্যাপারে নুপূর যত না সক্রিয়, তার থেকে অনেক বেশি ভাবনাচিন্তা নিজেই করেন সুস্মিতা। নুপূরের কথায়, ‘‘সুস্মিতা ফিটনেস নিয়ে সব সময় আপডেটেড। নতুন কোন এক্সারসাইজ় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা জেনে, তা নিয়ে জানার পরেই গবেষণা করে ফেলেন। তার পরে সেই এক্সারসাইজ় তাঁর শরীরের জন্য কী ভাবে উপযোগী হতে পারে, তা-ও নিজেই ঠিক করে ফেলেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলে সেই গবেষণা। কোনও খুঁত রাখেন না উনি।’’ সুস্মিতা ইদানীং তাঁর দৈনন্দিন ফিটনেস রুটিনে যোগ করেছেন ক্যালিস্থেনিক্স, এরিয়াল সিল্ক যোগা, রক ক্লাইম্বিং, মার্শাল আর্টের মতো অনেক কিছু। এ সবই সুস্মিতার গবেষণার ফসল বলে জানাচ্ছেন নুপূর।
খাবারদাবারের ব্যাপারেও সুস্মিতার পরিমিতি বোধ রয়েছে। তবে নুপূর বলছেন, ‘‘সুস্মিতা খাবার ব্যাপারে রুটিন মেনে চলেন। সময় ধরে বাঁধাধরা খাওয়াদাওয়া করেন। পেট ভর্তি বলে কোনও একটি সময়ের খাবার বাদ দেন অনেকেই। সুস্মিতা কক্ষনও তা করেন না। সাধারণত সুস্মিতার খাবারের বেশির ভাগটাই জুড়ে থাকে শাকসব্জি আর গ্রিল করা মাছ। এর পাশাপাশি প্রচুর জল খান সুস্মিতা। আর একটি পানীয়, যা ছাড়া সুস্মিতার দিন শুরু হয় না, তা হল নিমপাতার রস আর মধু।”
সোজা কথায় সুস্মিতার ফিটনেস রুটিনের পুরোটা জুড়েই রয়েছে, শৃঙ্খলা। তবে তার সঙ্গেই নিজের প্রতি ভাল লাগা, নিজেকে ভাল রাখার চেষ্টাও। নুপূর বলছেন, ‘‘সুস্মিতাকে দেখে বোঝা যায়, উনি যেটা করেন সেটা ভালবেসে করেন। আর শৃঙ্খলাকে যদি ভালবেসে ফেলা যায়, তবে তা মেনে চলার অনুপ্রেরণা আপনা থেকেই চলে আসে।’’