Students Week Closing Ceremony

নেতা-মন্ত্রীদের গানের লড়াই মুখ্যমন্ত্রী মমতার সামনে, গায়েনদের ‘মার্কশিট’ লিখল আনন্দবাজার অনলাইন

কেউ গাইলেন। কেউ গাওয়ার চেষ্টা করলেন। আবার অনেকে গান গাওয়ার ঝুঁকিই নিতে পারলেন না। তবে দেখা গেল, অভিনেতা তথা সাংসদ দেব যেমনই গান করুন, তাঁকে নিয়েই হইহই হল বেশি। গোটা হল ফেটে পড়ল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৩১
MPs, MLAs, Ministers sing on Mamata Banerjee\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s request at Students\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\' Week closing ceremony

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

ছিল ছাত্র সপ্তাহের সমাপ্তিতে সরকারি অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠান পরিণত হল গানের লড়াইয়ে। যে লড়াইয়ে অংশ নিলেন মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদেরা। এক এক করে ‘প্রতিযোগীদের’ ডেকে নিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারও গান শুনে বললেন, ‘‘ভেরি গুড!’’ আবার কারও বেসুরো গলা শুনে বলে স্বগতোক্তি করলেন, ‘‘বাবা রে!’’ তবে সব মিলিয়ে মন্দ হল না গানের লড়াই। ছিলেন পেশাদার গাইয়েরাও। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে ১০-এর মধ্যে কে কত নম্বর পেলেন? প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী যে ক্রমপর্যায়ে গায়কদের ডেকেছিলেন, তাঁদের নাম এবং নম্বরও সেই ক্রমপর্যায়েই রইল। কে বেশি বা কে কম নম্বর পেলেন, সেই নিরিখে নয়।

Advertisement

অদিতি মুন্সি ১০/

রাজারহাট গোপালপুরের বিধায়ক তথা সঙ্গীতশিল্পী অদিতিকেই প্রথম গাইতে বলেন মমতা। এমনিতে অদিতি কীর্তন গাওয়ার জন্যই প্রসিদ্ধ। তবে বুধবার গাইলেন রবি ঠাকুরের গান— ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।’ দু’কলি গাইলেও ভালই গেয়েছেন। অদিতি পাবেন ১০-এ ৭। অদিতির গানের পর তাঁর প্রশংসাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলে দিয়েছেন, ‘‘অদিতি কীর্তনের স্রষ্টা।’’

সায়নী ঘোষ ১০/৭.৫

অদিতির পরেই মমতা গাইতে ডাকেন অভিনেত্রী তথা যাদবপুরের সাংসদ সায়নীকে। যিনি রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও গান-টান গেয়ে থাকেন। কখনও তাঁকে গাইতে অনুরোধ করেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। কখনও ডাকাবুকো ভাঙড় এলাকার ডাকাবুকোতর বিধায়ক শওকত মোল্লা। তৃণমূলের মঞ্চে সায়নীর গাওয়া ‘দে দে পাল তুলে দে’ গানটি সমাজমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। মমতা তাঁকে বলেন, ‘‘তুমি তো লোকসঙ্গীতের মাস্টার! একটা ফোক ধরো।’’ সায়নী অবশ্য গানের আগে কিঞ্চিৎ গৌরচন্দ্রিকা করতে গিয়েছিলেন। মমতা বলেন, ‘‘গাও-গাও!’’ সঙ্গে সঙ্গেই ‘‘স্যরি, স্যরি’’ বলে ওঠেন সায়নী। তার পরে ধরেন, ‘‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখব, ছেড়ে দেব না।’’ গান, ভঙ্গিমা ইত্যাদি মিলিয়ে সায়নী পেলেন ১০-এ সাড়ে ৭।

MPs, MLAs, Ministers sing on Mamata Banerjee's request at Students' Week closing ceremony

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

জুন মালিয়া ১০/

মেদিনীপুরের সাংসদ জুনও সাহস করে দু’কলি গেয়েছেন। তবে ছাত্রদের উদ্দেশে পরামর্শ দিয়েছেন বেশি। জুন ভাল অভিনেত্রী। কিন্তু বুধবার বোঝা গেল, গানটা নেহাতই তাঁর আসে না। তবু কষ্টেসৃষ্টে ‘আমরা করব জয়’-এর হিন্দি তর্জমা গাইলেন। গানের চেয়ে গেয়ে ফেলার সাহসটাই বেশি দেখা গেল। সেই সাহসের জন্য তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ৬।

বাবুল সুপ্রিয় ১০/

গলা ভাল। গানও ভাল। বলিউড মাতিয়ে এসেছেন। বাংলাতেও ইদানীং যে সব গান গেয়েছেন, জনতা প্রশংসা করেছে। বড় বড় মঞ্চে পারফর্ম করেছেন। অমিতাভ বচ্চন, আশা ভোঁসলের সঙ্গে ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ করেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ গাইতে বলায় তিনিও সম্ভবত খানিক অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন। সেই কারণেই কি রবীন্দ্রসঙ্গীতের গানের কথা ভুল করে ফেললেন? বাবুল ধরলেন, ‘আমার মন বলে চাই চাই চাই গো’। পরের লাইনে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘সকল পাওয়ার মাঝে আমার মনে বেদন বাজে’। কিন্তু বাবুল গাওয়ার সময় ‘বাজে’ শব্দটির বদলে গেয়ে ফেলেন ‘জাগে’। বাকিটা অবশ্য বাবুলোচিতই ছিল। তবে কিনা গানের কথার ভুল যে কোনও প্রতিযোগিতাতেই লঘু দণ্ড পাওয়ার যোগ্য নয়। তাই ভাল গাইলেও বাবুল ১০-এ ৭-এর বেশি পাবেন না।

ইন্দ্রনীল সেন ১০/

ইন্দ্রনীলও পেশাদার গায়ক। তাঁকে যে মুখ্যমন্ত্রী গাইতে ডাকবেন, সে আর আশ্চর্য কী! তিনিও যে ভাল গাইবেন, তা-ও প্রত্যাশিত। বস্তুত, ইন্দ্রনীল গান শুরু করার আগে মমতা বলেন, ‘‘ও কিন্তু প্র্যাকটিস করে না। ওর গলাটাই ঈশ্বরপ্রদত্ত!’’ স্বভাবরসিক মন্ত্রী স্কুলপড়ুয়াদের সামনে ধরেছিলেন, ‘মনে পড়ে রুবি রায়।’ অন্তরা থেকে শুরু করে মুখড়ায় আসেন। তিনি গানের জন্য পেলেন ৭। দুই গায়ককে পরে সাহায্য করার জন্য মার্কশিটে যোগ হচ্ছে আরও ১। অর্থাৎ ১০-এ ৮।

ব্রাত্য বসু ১০/

অনুষ্ঠান ছিল ছাত্রছাত্রীদের। সেখানে শিক্ষামন্ত্রীকে তো গাইতে হবেই। দেখা গেল, নাট্যকার-পরিচালক-অভিনেতা ব্রাত্যের সঙ্গে গায়ক ব্রাত্যের কখনও মিলমিশ হয়নি। সুর যে তাঁর ভুবনে ‘ব্রাত্য’, সেটা অবশ্য গান ধরার আগে জানিয়েও দিয়েছিলেন মন্ত্রী। স্বভাবসুলভ রসিক ভঙ্গিতে বলেন, তিনি গান বলতে পারেন। গাইতে নয়। কিন্তু তা-ও তাঁকে গাইতে হয়েছে। ইন্দ্রনীল গীত রুবি রায়েরই কয়েকটি লাইন। সাহায্য চান ইন্দ্রনীলের কাছেই। কিন্তু ইন্দ্রনীল সাহায্যের গলা বাড়িয়ে দিলেও ব্রাত্যকে সুরে আনা যায়নি। তবে সততার কারণে তিনি পাশমার্কটি (৪) পেলেন।

দেব ১০/

প্রথমে গাইতে চাননি। দেব বলেন, গান নিয়ে তাঁর একটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আছে। ২০১১ সালের শহিদ দিবসে ব্রিগেডে তিনি মঞ্চ থেকে ‘পাগলু’ গেয়েছিলেন। তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। দেব বলেন, ‘‘তখন আমি একেবারেই নতুন। জানতাম না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি গাইতে চাইনি। সমানে যে বিশাল জনতা ছিল, তারাই ওই গানটা গাইছিল। তখন আমি গেয়েছিলাম।’’ সেই স্বীকারোক্তির পরে ইন্দ্রনীল দেবকে বলেন, ‘‘‘কে তুমি নন্দিনী’টা গা।’’ শুনেই মমতা পিছনের সারিতে বসে থাকা স্বরাষ্ট্রসচিবের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘‘এই তো নন্দিনী (চক্রবর্তী) বসে আছে। গাও, গাও।’’ কিন্তু দেবকে নড়ানো যাচ্ছিল না। দেখা গেল, তিনিও ইন্দ্রনীলের সাহায্য চাইলেন। ‘দূরের বলাকা’ কাছের হয়ে গলা বাড়ালেন। দেখা গেল, গাইছেন ইন্দ্রনীলই। হাতের মাইক্রোফোন মুখের অনেকটা দূরে রেখেই ঠোঁট নাড়ছেন দেব। ছবিতে প্লেব্যাকে ‘লিপ’ দেওয়ার মতো। সেই গান (বা ওষ্ঠ সঞ্চালন) শেষ হওয়ার পরে ছাত্রছাত্রীরা দাবি করে, ‘‘খাদানের একটা গান হোক।’’ দেব তখন আসনে ফিরে আসছেন। ফের মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘‘আরে, একটা গাও না!’’ খাদানের ‘কিশোরী’ গানটি গাইবার অনুরোধ ছিল। দেব জানান, তিনি গানটির কথা ভুলে গিয়েছেন। তবে পুরনো একটি ছবি থেকে ‘ও মধু, আই লভ ইউ’ গানটি শোনান। ওই আট লাইনেই পয়সা উসুল। ফেটে পড়ার উপক্রম হয় প্রেক্ষাগৃহ। গানে লবডঙ্কা ঠিকই। কিন্তু ওই স্বীকারোক্তি আর জনপ্রিয়তার জন্য ফার্স্ট ডিভিশনে (১০-এ ৬) উতরে গিয়েছেন।

পুনশ্চ: সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তী এবং রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও মঞ্চে ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তাঁরা কেউই গান গাওয়ার ঝুঁকি নেননি। ভাগ্যিস!

Advertisement
আরও পড়ুন