সাংবাদিক বৈঠকে নুসরত জাহান। —ফাইল চিত্র।
প্রতারণার অভিযোগ ওঠার দেড় দিন পর সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন। সেই বৈঠক আধ ঘণ্টাও গড়াল না। ১০ মিনিটের মধ্যেই নিজের কথা বলে, প্রায় সমস্ত প্রশ্ন এড়িয়ে কলকাতা প্রেস ক্লাব চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন টলিউড অভিনেত্রী তথা বসিরহাটের সাংসদ নুসরত জাহান।
বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা তৃণমূলের লোকসভা সাংসদের বিরুদ্ধে ফ্ল্যাট দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন সোমবার সন্ধ্যায়। মঙ্গলবার রাতে তাতে সুর মিলিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। এর পরই বুধবার দুপুরে প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন নুসরত। আড়াইটের সময় সেই বৈঠক শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নুসরত আসেন ২৫ মিনিট দেরিতে। ঠিক ৩টে বেজে ৫ মিনিটে প্রেস ক্লাব ছেড়ে বেরিয়ে যান বসিরহাটের সাংসদ।
নুসরতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি যে সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন, সেই সংস্থা ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেকের থেকে টাকা নিয়েও শেষে ফ্ল্যাট দেয়নি। উল্টে সেই টাকায় নায়িকা সাংসদ নিজের ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে দাবি করেছিলেন শুভেন্দু। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে নুসরত জানান, তিনি ওই সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে নিজের ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। সেই ঋণ সুদ-সহ ফিরিয়েও দিয়েছেন। কোনও দুর্নীতির সঙ্গে তিনি যুক্ত নন।
যদিও নুসরতের এই বক্তব্যের পরই সাংবাদিকদের তরফ থেকে প্রশ্ন উড়ে আসে, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ না নিয়ে নুসরত কেন ওই সংস্থা থেকে ঋণ নিলেন? এই প্রশ্ন শুনে দৃশ্যতই মেজাজ হারিয়ে সাংবাদিক বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান তৃণমূল সাংসদ।
নিজের কথা বলার পরেই সাংবাদিক বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন নুসরত জাহান। উত্তর দিলেন না কোনও প্রশ্নের। ১০ মিনিটেই শেষ সাংসদ তথা অভিনেত্রী নুসরতের সাংবাদিক বৈঠক।
‘‘যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তাদের থেকেই ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৫ টাকার ঋণ নিয়েছিলাম। সেই টাকায় বাড়ি কিনেছি। ২০১৭ সালের ৬ মে সুদ-সহ ১ কোটি ৪০ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৯৫ টাকা ফেরত দিয়েছি কোম্পানিকে। ব্যাঙ্কের নথিও আমার কাছে আছে। ৩০০ শতাংশ চ্যালেঞ্জ করতে পারি যে, আমি দুর্নীতিতে যুক্ত নই। আমি এক পয়সা নিলেও এখানে আসতাম না।’’ প্রসঙ্গত মঙ্গলবার শুভেন্দু অধিকারী একটি সংস্থার নাম বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, সেই সংস্থার নামেই দুর্নীতি করেছিলেন বসিরহাটের সাংসদ নুসরত। নুসরত জানালেন, ওই সংস্থা থেকেই ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকা ফেরৎ দিয়ে দিয়েছেন।
নুসরত জানালেন, শুটিংয়ের জন্য গভীর রাতে বাড়ি ফিরেছি। তাই মঙ্গলবার কথা বলতে পারিনি।
কথা ছিল আড়াইটে থেকে সাংবাদিক বৈঠকে বসবেন। ঠিক ২৫ মিনিট পর শুরু হল নুসরতের সাংবাদিক বৈঠক। নুসরত বললেন, আমি ব্যাখ্যা দিতে আসিনি। ব্যাখ্যা তাঁরা দেয়, যাঁরা ভুল করেছে এবং ভয় পায়।
গত সোমবার নুসরত জাহানকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পান্ডা। ইডির কাছে নুসরতের বিরুদ্ধে ২৪ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ এনে শঙ্কু বলেন, এই অভিযোগ পাওয়ার পরও ইডি যদি নিষ্ক্রিয় থাকে, তবে কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধেও মামলা করবেন তিনি। মঙ্গলবার শুভেন্দুও বলেন, ‘‘বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। প্রবীণ মানুষদের টাকা নিয়ে সাংসদ নিজে এক কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছেন। এটা বিরাট দুর্নীতি!’’
শঙ্কুদেব তাঁর অভিযোগে ইডিকে জানিয়েছিলেন, গড়িয়াহাট রোডের একটি সংস্থায় যৌথ ডিরেক্টর পদে রয়েছেন নুসরত। ওই সংস্থা ২০১৪ সালে মোট ৪২৯ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল। ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছিল প্রত্যেকের থেকে। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, রাজারহাটে হিডকোর দফতরের কাছে তাঁদের প্রত্যেককে ৩ কামরার (৩ বিএইচকে) ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। তিন বছরের মধ্যে ওই ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও, যাঁরা টাকা দিয়েছিলেন তাঁরা কোনও ফ্ল্যাট পাননি বলে ইডিকে জানান শঙ্কু।
যে বয়স্ক নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে ইডির কাছে গিয়েছিলেন শঙ্কুদেব, তাঁরা অভিযোগ করেছেন, নুসরতের সঙ্গে ওই সংস্থার যৌথ ডিরেক্টর ছিলেন রাকেশ সিংহ নামে এক ব্যক্তি। তবে ফ্ল্যাট পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নুসরত নয়, রাকেশই দিয়েছিলেন তাঁদের।