PWD Flyovers

মাঝেরহাটের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে উদ্যোগী পূর্ত দফতর, বড়-ছোট সব সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে নির্দেশ

বর্তমানে ২২০০-রও বেশি সেতু রয়েছে পূর্ত দফতরের অধীনে। এর মধ্যে প্রায় ১৫০টি রয়েছে উত্তরবঙ্গে। সেই সব সেতুর স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে জানতে চাইছেন দফতরের আধিকারিকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৫৮

—প্রতীকী ছবি।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আচমকাই ভেঙে পড়েছিল মাঝেরহাট সেতু। সেই সময় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল পূর্ত দফতরকে। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার ছোট ও বড় সব ধরনের সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ত দফতর। এমনিতে প্রতিবছর বর্ষা আসার আগেই রাজ্যের সব সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়। কিন্তু এ বার বিশেষ ভাবে এই কাজে তৎপর রাজ্য পূর্ত দফতর। বর্তমানে ২২০০-রও বেশি সেতু রয়েছে পূর্ত দফতরের অধীনে। এর মধ্যে প্রায় ১৫০টি রয়েছে উত্তরবঙ্গে। সেই সব সেতুর স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে জানতে চাইছেন দফতরের আধিকারিকেরা। হালকা, মাঝারি থেকে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে এমন সব সেতুর বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইছে পূর্ত দফতর। সেই কারণেই সম্প্রতি সমস্ত সেতুর দ্রুত পরিদর্শনের নির্দেশ জারি হয়েছে। যা চলতি মাসের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে হবে।

Advertisement

গত ৩ এপ্রিল নবান্নে পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় ও দফতরের সচিব অন্তরা আচার্যের উপস্থিতিতে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বৈঠকে প্রতিটি সেতুর বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করেন দফতরের আধিকারিকেরা। পরিদর্শনের পর প্রতিটি সেতুর তথ্য ‘সমীক্ষা’ পোর্টালে আপলোড করতে হবে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে। পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ— তিনটি জোনের চিফ ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন এই বিষয়ে কাজের অগ্রগতির উপর নজর রাখেন, এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করেন। পূর্ত দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, যাবতীয় রিপোর্ট হাতে পেলে যে সব সেতুতে আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেখানে দ্রুত হাইট ব্যারিকেড বসানো, সতর্কতা বোর্ড লাগানো ও ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়েছিল। এর পর রাজ্য সরকার সেতুটি সম্পূর্ণ ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লকডাউন পরিস্থিতিতে সেতু নির্মাণের কাজ ধাক্কা খেয়েছিল। নতুন মাঝেরহাট সেতুর উদ্বোধন হয়েছিল ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর। সেই দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেতুটির উদ্বোধন করেন এবং এর নতুন নামকরণ করেন ‘জয় হিন্দ ব্রিজ’। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই নামকরণ করা হয়েছিল। সেতুটি প্রায় ৬৫০ মিটার লম্বা এবং ৩৮৫ টন ভার বহনে সক্ষম। সেতুর ২২৭ মিটার অংশ ঝুলন্ত কাঠামোতে নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে ১০০ মিটার রেললাইনের উপরে অবস্থিত। অতি তৎপরতায় সেতু তৈরির কাজ শেষ হলেও, প্রশ্ন উঠেছিল পূর্ত দফতরের দায়বদ্ধতা নিয়ে। এই সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে বেহালা জনপদ তো বটেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকার সঙ্গে সড়কপথের কলকাতার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আর তেমন পরিস্থিতি চাইছেন না পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা। পরিস্থিতি বুঝে নিউ আলিপুরের ডিরোজিও সেতুর উপর হাইট বার বসিয়ে ভারী পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “মাঝেরহাট ব্রিজ দুর্ঘটনার পর থেকেই সরকার সেতু পরিদর্শনে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ বারও বর্ষা নামার আগেই আমরা সমস্ত সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে চাই। যাতে কোনও বিপদ না ঘটে।” কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এই ২২০০টি সেতু স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার পরিকাঠামো কি আদৌ স্বাস্থ্য দফতরের রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে পূর্ত দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ বিষয়ে কাজে গতি আনতে জেলাশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় সাধনে একাধিক বৈঠকও শুরু করেছেন পূর্ত দফতরের শীর্ষকর্তারা। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ১২টি জেলায় এমন বৈঠক হয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন