Hamidul Rahman on Chopra Case

বিধানসভার বৈঠকে যোগ দিতে এসে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে মেজাজ হারালেন চোপড়ার হামিদুল

বুধবার বিধানসভার বৈঠকে যোগ দিতে আসেন চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল ইসলাম। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের বার বার মেজাজ হারিয়েছেন হামিদুল। শেষে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে হলুদ ট্যাক্সি ধরে বিধানসভা ছেড়ে চলে যান তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪ ১৫:৩১
MLA Hamidul Rahman frequently became irate when questioned by the media on Chopra Assault Case

(বাঁ দিকে) প্রকাশ্যে আসা গণপিটুনির ভিডিয়োর দৃশ্য। হামিদুল ইসলাম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

চোপড়ার গণপিটুনির ঘটনা নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়েছেন বিধায়ক হামিদুল ইসলাম। বুধবার বিধানসভার বৈঠকে যোগ দিতে এসে একঝাঁক প্রশ্নের মুখে পড়লেন চোপড়ার বিধায়ক। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পড়ে বার বার মেজাজ হারালেন তিনি। মঙ্গলবারই তাঁকে শোকজ় করেছে দল। আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে ধমক দিয়েছেন হামিদুলকে। এ হেন পরিস্থিতিতে চাপের মুখে পড়েছেন হামিদুল। তাঁর ‘ইসলামিক রাষ্ট্র’ সংক্রান্ত মন্তব্য থেকে অনুগামী তাজিমুল ইসলাম ওরফে জেসিবিকে নিয়ে একঝাঁক প্রশ্নের মুখে পড়ে শেষে তড়িঘড়ি হলুদ ট্যাক্সি চেপে বিধানসভা চত্বর ছেড়ে চলে যান তিনি।

Advertisement

বুধবার বিধানসভার বৈঠকে যোগ দিতে আসেন চোপড়ার বিধায়ক। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেন এমন ঘটনা ঘটল? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মহিলাটি অন্যায় করেছে।’’ পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, কী অন্যায় করেছে? জবাবে বিধায়ক বলেন, ‘‘সেই জবাব গ্রামবাসীরা দেবে।’’ আবারও তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তা হলে কি আপনি নীতিপুলিশি করছেন? জবাবে হামিদুল বলেন, ‘‘তবে ওদের সঙ্গেও অন্যায় হয়েছে। আমি নীতিপুলিশ নই। আমি ওদের কারও হাতে তুলে দিইনি। যারা অন্যায় করেছে, ভিডিয়ো দেখে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে।’’

এর পরেই জেসিবি-কে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে চোপড়ার বিধায়ক বলেন, ‘‘ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই পুলিশ পাঠিয়ে ওকে গ্রেফতার করানো হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘২৮ তারিখে ঘটনাটি ঘটেছে। তার পর ২৯, ৩০, ১,২ তারিখে সব টিভিতে এই ঘটনাটি দেখিয়েছে। তার পর এ সব করার কি মানে হয়? নতুন করে আমার কিছু বলার নেই।’’ নিজের ‘ইসলামিক রাষ্ট্র’ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যায় হামিদুল বলেন, ‘‘আমি কোনও ভুল কথা বলিনি, আপনারা আমার কথাকে ভুলvভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।’’ সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের বার বার মেজাজ হারিয়েছেন হামিদুল। শেষে হলুদ ট্যাক্সি ধরে বিধানসভা ছেড়ে চলে যান তিনি।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে চোপড়ার বিধায়ককে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিনিট পাঁচেক কথাও হয় তাঁদের। উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, চোপড়ায় যাতে আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে চলতে হামিদুলকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে চোপড়ার সব পঞ্চায়েত এবং স্থানীয় ক্লাবকেও বার্তা পাঠাতে বলেছেন। আগামী দিনে কোনও সালিশি সভা যেন না বসানো হয়, বলেছেন তা-ও । যদি এলাকায় কোনও সমস্যা হয়েই থাকে, তবে তা যেন পুলিশ-প্রশাসনের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও চোপড়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত যদি দলের কোনও পদে থেকে থাকেন, তা হলে যেন অবিলম্বে তাঁকে সেই পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হয় বলেও বিধায়ককে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তাঁর সঙ্গে জেসিবির যোগাযোগ প্রসঙ্গে মমতাকে হামিদুল বলেছিলেন, ‘‘ও আমাদের ভোটার। দলের কেউ নয়।’’

চোপড়ার ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক হামিদুলকে শোকজ় করেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের এক শীর্ষনেতার নির্দেশেই চোপড়ার বিধায়ককে শোকজ়ের চিঠি পাঠানো হয়। এমনকি, কী মর্মে চিঠি পাঠাতে হবে তা-ও বলে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল হামিদুলকে শোকজ়ের চিঠি পাঠিয়েছেন। শোকজ় নোটিসের জবাব দেওয়ার জন্য হামিদুলকে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। হামিদুল জবাব দিলে তা রাজ্য নেতৃত্বকে পাঠাবেন জেলা সভাপতি। হামিদুলকে নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্য নেতৃত্বই। সূত্রের খবর, চোপড়ায় যুগলকে গণপিটুনির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর হামিদুল যে মন্তব্য করেছিলেন, তার ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement