গ্রাম হোক বা শহর। বর্ষার পরে রাস্তার চেহারা কঙ্কালসার। কবে মিলবে সুরাহা।
Poor condition of road

বেহাল রাস্তায় নাজেহাল গ্রামবাসী

বর্ষার পরে রাস্তার কঙ্কালসার চেহারা সর্বত্র। সুরাহা কবে?

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৪৯
মেদিনীপুর গ্রামীণের গোলাপীচকের বেহাল রাস্তা।

মেদিনীপুর গ্রামীণের গোলাপীচকের বেহাল রাস্তা। ছবি: কিংশুক আইচ।

সামনে পুজো। গ্রামের রাস্তা নিয়ে চিন্তা অবশ্য যাচ্ছে না। পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে অজস্র গ্রামীণ রাস্তা বেহাল। যেমন গড়বেতার ময়রাকাটা থেকে খড়কুশমা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তা এতটাই বেহাল যে, অনেকেই ঘুরপথে যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। বালি, মোরামের গাড়ি চলাচলে ছোট-বড় গর্ত আরও তৈরি হয়েছে। রাস্তা সারানোর কথা জেলা পরিষদের। ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তবে এখনও কাজ শুরু হয়নি। ভোগান্তিতে পড়েছেন ২০-২২টি গ্রামের মানুষ। পুজোর আগেই কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়েরা।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম জেলায় গত কয়েক বছরে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ, পূর্ত দফতর, এমনকি গ্রামীণ সড়ক যোজনায় অনেক রাস্তা তৈরি হয়েছে। কিন্তু অনেক রাস্তা বেহাল। ১৫৮টি রাস্তা পথশ্রী- রাস্তাশ্রী প্রকল্পে তৈরি হওয়ার কথা। এই প্রকল্পের জন্য খরচ হচ্ছে ৯৩ কোটি টাকা। অনেক রাস্তার কাজ এখনও শেষ হয়নি। গ্রামীণ এলাকায় বহু রাস্তা খারাপ। বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের কুলিয়ানা গ্রামের রাস্তা খানাখন্দে ভরা। পথশ্রী নিয়ে অভিযোগও রয়েছে। ঝাড়গ্রাম গ্রামীণে অনেক জায়গায় পথশ্রীর বোর্ড বসেছিল। কিন্তু রাস্তা তৈরি হয়নি। গ্রামীণ এলাকায় এখনও কাঁচা রাস্তা রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদায় ভরে যায়। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর আমলে যে সংখ্যক রাস্তা তৈরি হয়েছে, তা বিগত দিনে হয়নি। গ্রামীণ এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা পাল্টে গিয়েছে।’’ জেলা বিজেপির সহ সভাপতি দেবাশিস কুন্ডু বলেন, ‘‘রাস্তার জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তার অর্ধেক টাকা তৃণমূল নেতাদের পকেটে চলে গিয়েছে কাটমানি হিসেবে। যার ফলে তৈরির কয়েক দিনের মধ্যেই রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের নয়!’’

বন্যা পরিস্থিতিতে ঘাটালের বেশ কিছু রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। টানা বৃষ্টিতে, জমা জলে দাসপুর, চন্দ্রকোনার গ্রামীণ রাস্তাও খানাখন্দে ভর্তি। বন্যায় ঘাটাল ব্লকের দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় দেড়শোটি গ্রাম জলের তলায় চলে গিয়েছিল। প্রায় শতাধিক রাস্তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঘাটালের বিডিও সঞ্জীব দাস মানছেন, ‘‘ঘাটাল ব্লকে রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একশোটিরও বেশি রাস্তা নষ্ট হয়েছে। পঞ্চায়েতের তরফে প্রাথমিকভাবে রাস্তাগুলি মেরামত করা হচ্ছে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু ব্লকে ‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। কেন কাজের গতি শ্লথ, পর্যালোচনা বৈঠকে জানতে চেয়েছিল জেলা। কোনও ব্লকের যুক্তি, মাঠে চাষের কাজ চলছে। তাই সংশ্লিষ্ট রাস্তার কাজ বন্ধ! কোনও ব্লকের যুক্তি, বৃষ্টি হচ্ছে বলে কাজটা শেষ করা যাচ্ছে না! আবার কোনও ব্লকের যুক্তি, বালির খানিক সমস্যা তাই কাজ এগোচ্ছে না!

‘পথশ্রী- রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৪৯৪টি গ্রামীণ রাস্তা তৈরি এবং সংস্কার হওয়ার কথা। এখনও পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি অনেকগুলিরই। জেলার ২১টি ব্লকে সবমিলিয়ে ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। পঞ্চায়েতপিছু গড়ে দু’টি করে রাস্তা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই ৪৯৪টি রাস্তার মধ্যে জেলা পরিষদ তৈরি করবে ৩৯টি রাস্তা, ব্লক প্রশাসন তৈরি করবে ৩৬৬টি এবং ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট রুরাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’ (ডব্লুবিএসআরডিএ) তৈরি করবে ৮৯টি রাস্তা। কিছু ব্লকের কাজের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে জেলারও। ঘাটাল, কেশিয়াড়ি, কেশপুর, নারায়ণগড়— এই চারটি ব্লকে সবমিলিয়ে ১৪১টি রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা পথশ্রী- রাস্তাশ্রী প্রকল্পে। এখনও পর্যন্ত ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে ১৩১টির। কাজ শেষ হয়েছে ৬৫টির। জেলার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ মানছেন, ‘‘কিছু রাস্তার অবস্থা খারাপ। রাস্তাগুলির সংস্কারে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ চলবে

(তথ্য সহায়তা: অভিজিৎ চক্রবর্তী, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য,
রঞ্জন পাল, বরুণ দে)

আরও পড়ুন
Advertisement