ASEAN

আসিয়ানকে কাছে টেনে চিনকে বার্তা মোদীর

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দৌত্য মজবুত করতে এবং চিনের বিরুদ্ধে পাল্টা ভূরাজনৈতিক চাপ বহাল রাখতে আজ দুদিনের সফরে লাওস পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৩৪
লাওসে বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী।

লাওসে বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী। ছবি রয়টার্স।

চিনের নাম করলেন না। কিন্তু লাওস-এর মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ চিন বিরোধী পূর্ব এশিয়ার গোষ্ঠী আসিয়ানের সঙ্গে ভারতের বিশেষ রণকৌশলগত মাত্রা জুড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানালেন, ‘একবিংশ শতাব্দী ভারত এবং আসিয়ানের।’ তাঁর বার্তা, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যখন সংঘাত বাড়ছে, তখন এই আঞ্চলিক ব্লক এবং ভারতের মধ্যে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

Advertisement

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দৌত্য মজবুত করতে এবং চিনের বিরুদ্ধে পাল্টা ভূরাজনৈতিক চাপ বহাল রাখতে আজ দুদিনের সফরে লাওস পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ ভারত এবং আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় মোদী প্রকারান্তরে চিনের সম্প্রসারণবাদের দিকেই তর্জনি নির্দেশ করেছেন। তাঁর কথায়, “আমরা শান্তিপ্রিয় সব দেশ। একে অন্যের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করি। যুবশক্তির ভবিষ্যত উজ্জ্বল করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বিশ্বাসও আমার রয়েছে যে, একবিংশ শতাব্দী ভারত এবং আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলির শতাব্দী।” এর পরই তিনি বর্তমান রণনৈতিক অস্থিরতার প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, “আজ যখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাত এবং উত্তেজনার পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, ভারত এবং আসিয়ানের মধ্যে বন্ধুত্ব, সংলাপ এবং সহযোগিতা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”

আসিয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিস্তারের পাশাপাশি ভারত এবং লাওসের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের দিকেও পৃথক নজর দেওয়া হয়েছে এই সফরে। বহু শতক ধরে পূর্বের দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের সূত্র ধরে ভারতীয় সংস্কৃতি পৌঁছে গিয়েছে সে সব দেশে। পৌঁছেছে রামায়ণ। রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে প্রধানমন্ত্রীর সামনে আজ মঞ্চস্থ হয়েছে সেই রামায়ণ, যা লাওসে ‘ফ্রা লাক ফ্রা লাম’ (ফ্রা লক্ষ্মণ ফ্রা রাম) হিসাবে পরিচিত। রামায়ণের লাও সংস্করণ, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ‘রামকিয়েন’ নামেও সুপরিচিত। বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, মুখ্য চরিত্রগুলোর মধ্যে আছেন ফ্রালাক (লক্ষ্মণ), ফ্রালাম (রাম), নাং সিডা (সীতা), থোৎসাখান বা হপখানাসুয়ান (রাবণ), হনুমান, সম্পাতি এবং জটায়ু প্রভৃতি। সবচেয়ে বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনা লুয়াং প্রাবাংয়ের রয়্যাল ব্যালে থিয়েটার (ফালাক ফালাম থিয়েটার)-এঅনুষ্ঠিত হয়।

আজ লাওস পৌঁছনোর পর প্রবাসী ভারতীয়েরা বিহু নৃত্যের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছেন মোদীকে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন সেই দৃশ্য। তিনি লেখেন, সেখানকার ভারতীয় সম্প্রদায় স্পষ্টতই তাঁদের শিকড়ের সাথে সংযুক্ত। তিনি আনন্দিত যে, তাঁরা হিন্দিতে কথা বলছেন এবং বিহু নাচ করেছেন!

আজ ভারত-আসিয়ান সম্মেলনের পরে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল গণ পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো হবে। আসিয়ান সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলি এবং ভারতের মধ্যে এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। ডিজিটাল পরিকাঠামোর যৌথ উদ্যোগে (ভারত এবং আসিয়ান) স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এবং পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করা সম্ভব। পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রযুক্তি প্রসঙ্গেও বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে আজকের সম্মেলনে। যৌথ বিবৃতি বলছে, আসিয়ান এবং ভারতের আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তিকে আরও বেশি করে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই, স্থায়ী আর্থিক বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলিতে সহযোগিতার বিস্তার নিয়ে বিশদে বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

প্রধানমন্ত্রী আজ লাওসের পথে রওনা হওয়ার আগে বলেন, "আমি আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলির নেতাদের সঙ্গে আমাদের সামগ্রিক কৌশলগত সম্পর্ক নিয়ে পর্যালোচনা করব। ভবিষ্যতে কোন পথে এগোনো যায়, তার নকশাও তৈরি করা হবে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং স্থায়িত্বের জন্য পূর্ব এশিয়া সম্মেলনও খুব বড় ভূমিকা নিতে চলেছে।" একই সঙ্গে লাওসের সঙ্গে ভারতের ঐতিহ্যগত সংযোগের প্রশ্নে বৌদ্ধধর্ম এবং রামায়ণ নিয়েও বলেন মোদী। প্রসঙ্গত এই সংযোগ নিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, স্থানীয় কিংবদন্তি এই সংযোগকে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের সময়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে। লোককথা অনুসারে, অশোকের দূত প্রিয়া চান্থাবুরি পাসিথিসাক পাঁচ জন ভিক্ষুর সঙ্গে লাওসে গিয়ে বুদ্ধের পবিত্র অবশেষ নিয়ে যান এবং তা ‘ফা দ্যাট লুয়াং’ স্তূপ নামে পরিচিতি লাভ করে, যা বর্তমানে লাওসের জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ রূপে স্বীকৃত। লাওসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল ‘ওরাংখারিত্তান’ এই কিংবদন্তিকে সমর্থনও করে, যেখানে বলা হয়েছে যে বুদ্ধের পবিত্র অবশেষ ভারতের রাজগীর থেকে লাওসে আনা হয়েছিল।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মুক্ত ও স্বাধীন বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষে বরাবরই সওয়াল করেছে ভারত। নয়াদিল্লি মনে করে, এই অঞ্চলে প্রত্যেকটি দেশেরই নিজের নিজের সার্বভৌমত্ব এবং সীমান্ত রক্ষার অধিকার রয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগরের বর্তমান পরিস্থিতিই গোটা বিশ্বের নজর সে দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। মোদীর বর্তমান লাওস যাত্রা এই পরিপ্রেক্ষিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন
Advertisement