সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতা কুরবান শা খুনের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পেলেন যুব তৃণমূলের দাপুটে নেতা আনিসুর রহমান। তবে জামিন পেলেও আনিসুর পূর্ব মেদিনীপুরে ঢুকতে পারবেন না। তাঁকে দৈনিক পুলিশের কাছে হাজিরাও দিতে হবে।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর পাঁশকুড়ার মাইশোরায় দলীয় কার্যালয়েই খুন হন পাঁশকুড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কুরবান। অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসে আনিসুরের নাম। তিনি অবশ্য তখন বিজেপিতে। আনিসুরকে গ্রেফতার করে ‘বিশেষ তদন্তকারী দল’ (সিট)। ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচনের আগে, রাজ্য সরকার কুরবান হত্যা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। তার পরেই আনিসুর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার কথা ঘোষণা করেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্য সরকারের সুপারিশ বাতিল করে এবং নির্দেশ দেয়, হাই কোর্টের নজরদারিতে কলকাতা নগর ও দায়রা আদালতে ওই হত্যা মামলার বিচার চলবে।
তার পরে গত পাঁচ বছর ধরে সংশোধনাগারে আটক ছিলেন আনিসুর। বিভিন্ন আদালতে একাধিক বার তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে। অবশেষে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা ও বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসীহ্-র বেঞ্চ আনিসুরের জামিন মঞ্জুর করেছে। আনিসুরের পক্ষের আইনজীবী অমরজিৎ সিংহ বেদী জানান, পাঁচ বছরের বেশি আনিসুর জেল-বন্দি। মূল সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। আপাত ভাবে আনিসুরকে দোষী সাব্যস্ত করার মতো তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। কুরবান শা-র পরিবারের আইনজীবীরা অভিযোগ তুলেছিলেন, আনিসুর ছাড়া পেলে পূর্ব মেদিনীপুরে গিয়ে এই মামলার নিষ্পত্তিতে প্রভাব খাটাতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা মত দেন, যেহেতু আনিসুরের বিরুদ্ধে খুনের মামলার অভিযোগ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তিনি পূর্ব মেদিনীপুরে ঢুকতে পারবেন না। তাঁকে দৈনিক পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হবে।
প্রথমে সিপিএম, পরে তৃণমূল, শেষে বিজেপিতে যান আনিসুর। কিন্তু সংশোধনাগারে থাকাকালীন সমাজমাধ্যমে আনিসুরের নামে পোস্টে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর পুরনো সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বার আনিসুরের গ্রেফতারকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলেন। দায়ী করেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকে। লোকসভা ভোটের প্রচারে পাঁশকুড়ায় মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমার একটি পছন্দের ছেলেকে ওই গদ্দার (বিশ্বাসঘাতক) জেলে রেখে দিয়েছে। কিন্তু আগামী দিনে ওকে বার করবই।’’ এ দিন আনিসুুুরের জামিনের পরে, তৃণমূলের জেলা (তমলুক) সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জামিনের শর্ত রয়েছে যে উনি জেলায় ফিরতে পারবেন না। তবে শর্ত এক দিন উঠবে। তখন উনি ফিরে এসে দলের কাজে যুক্ত হবেন।’’