শালবনির সেই জমি (বাঁ দিকে)। মাদ্রিদে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
১৫ বছর আগে শিলান্যাস হয়েছিল। কিন্তু সেই শিলা ক্ষয়ে গিয়েছে। শিলান্যাসের পরেও বাম আমলে ইস্পাত কারখানা হয়নি। তৃণমূল আমলে হবে কি? জিন্দল গোষ্ঠী শালবনিকে যে ইস্পাত কারখানার স্বপ্ন দেখিয়েছিল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কি তা পূরণ করবেন? শুক্রবার মাদ্রিদে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ জানিয়েছেন, মেদিনীপুরে তিনি একটি ইস্পাত কারখানা গড়ছেন। সেই ঘোষণার পর থেকে এমনই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির মানুষের মনে। আবারও আশায় বুক বাঁধছেন তাঁরা।
২০০৮ সালের ২ নভেম্বর। শালবনির গাইঘাটার অদূরে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার শিলান্যাস করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ৪,৩০০ একর জমি নিয়েছিল জিন্দল গোষ্ঠী। প্রচুর কর্মসংস্থানের আশায় বুক বেঁধেছিলেন জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা। কিন্তু ইস্পাত কারখানা হয়নি। রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। ২০১৮ সালে মাত্র ১৩৫ একর জায়গায় একটি সিমেন্টের কারখানা তৈরি করে বাকি পড়ে থাকা জমি রাজ্যকে ফিরিয়ে দেয় জিন্দলরা। হাতেগোনা কয়েক জনের কাজ হয়। খালি পড়ে থাকে বিশাল জমি।
শুক্রবার স্পেনের মাদ্রিদে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত শিল্প সম্মেলনে শিল্পপতি সৌরভের তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণার পর শালবনির জামবেদিয়া, কুলফেনি, আশনাশুলি-সহ ২৮টি গ্রামের জমিদাতারা আবার দেখছেন ইস্পাত কারখানার স্বপ্ন।
জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে বুদ্ধদেবের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাম বিলাস পাসোয়ান। কিন্তু শালবনি থেকে মেদিনীপুর ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটে। কলাইচণ্ডী খালের কাছে সেই বিস্ফোরণে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন বিশিষ্টেরা। তার পর শুরু হয় লালগড় আন্দোলন। লালগড়ে শুরু হয় পুলিশি অভিযান। মাওবাদী সন্দেহে ধরপাকড়ের মধ্যে ইস্পাত কারখানার স্বপ্ন ওই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনেই শেষ হয়ে গিয়েছে। কারখানা আর তৈরি হয়নি। দীর্ঘ দিন জমি পড়েছিল। প্রায় এক দশক পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ১৩৫ একর জমির উপর ছোট্ট একটি সিমেন্টের কারখানা তৈরি করে জিন্দল গোষ্ঠী। বাকি প্রায় ১,২০০ একর জমি নেওয়ার পর প্রায় আড়াই হাজার একর জমি রাজ্যকে ফিরিয়ে দেয় ওই শিল্পগোষ্ঠী।
এখন জিন্দলদের ওই সিমেন্ট কারখানায় কাজ করেন জমিদাতাদের পরিবারের তিন জন। তাঁরা স্থায়ী কর্মী। এ ছাড়া কমবেশি ১৫০ জন অস্থায়ী কর্মী কাজ করছেন। অন্য দিকে, সৌরভ ঘোষণা করেছেন রাজ্যে তাঁর দ্বিতীয় ইস্পাত কারখানা হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। প্রায় ১২ হাজার কর্মসংস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এতেই ইস্পাতের ঝলকানি খেলেছে শালবনির বাসিন্দাদের মুখে। শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহের কথায়, ‘‘সৌরভের এই ঘোষণায় আমরা খুশি। শালবনিবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল পড়ে থাকা জায়গায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠুক। সৌরভ এখানে কারখানা করলে এলাকার মানুষজন তাঁকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।’’
একই কথা বলছেন জমিদাতা বিমল চালকও। তাঁর কথায়, ‘‘এক সময় স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জিন্দলেরা। আবার আশার আলো দেখতে পাচ্ছি মহারাজের কথায়। আশা করছি, উনি নিরাশ করবেন না। সেই আশাতেই বুক বাঁধতে শুরু করেছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার মতো সব জমিদাতা চান যে, তাঁদের দেওয়া জমিতে কারখানা গড়ে উঠুক। তাতে আমাদের পরিবারের সদস্যেরাও যেমন কাজ পাবেন, অন্যদেরও কর্মসংস্থান হবে।’’
সৌরভের ঘোষণায় আশার আলো দেখছেন ‘ল্যান্ড লুজ়ার’ সংগঠনের সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতোও। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি শালবনিতে এসেছিলেন। সেই সময় পড়ে থাকা জমিতে শিল্প কারখানা করার আবেদন জানিয়েছিলাম। সেই ফলস্বরূপ মহারাজ এগিয়ে আসছেন বলে মনে হচ্ছে। ওঁকে ধন্যবাদ। জমিদাতাদের দীর্ঘ দিনের দাবি এ বার পূরণ হবে বলে আশা করছি।’’