—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নিক্ষয় মিত্রে অক্ষয় প্রচেষ্টার ফল কি তবে ফলতে শুরু করল!
যক্ষ্মা রোগীর অতিরিক্ত পুষ্টির জোগান দিতে রয়েছে ‘নিক্ষয় মিত্র’ কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিতে রাজ্যের মধ্যে এগিয়ে জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলা। ঝাড়গ্রাম জেলায় ১০০ শতাংশ রোগীকে এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যা বিগত দিনে কোনওদিন হয়নি। সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। জেলায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার আট শতাংশ থেকে চার শতাংশে নেমেছে।
কী ভাবে এল এই সাফল্য? চিকিৎসা প্রশাসনের সঙ্গে অনেকেই বলেছেন, সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে কৃশানু-বিকাশ জুটি। নব্বইয়ের দশকের এই জুটি এখনও ভারতীয় ফুটবলে মিথ। এ যেন ঠিক সেই জুটির মতো। জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলার ভুবন-শুভদীপ জুটি। এঁরা দু’জনই ফুটবলার নন। চিকিৎসক। ভুবনচন্দ্র হাঁসদা এখন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। শুভদীপ বিশ্বাস ডেপুটি সিএমওএইচ-৪। এই জুটিই ভেঙেছে যক্ষ্মার রেকর্ড। ভুবনচন্দ্র বলছেন, ‘‘আমার ও শুভদীপের পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য এই কাজ সম্ভব হয়েছে। দু’জন মিলে যক্ষ্মার কাজ দেখাশোনা করছি। পাশাপাশি সকলে এগিয়ে এসেছে।’’
২০২০ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত কে এস রায় যক্ষ্মা হাসপাতালের সুপার ছিলেন ভুবনচন্দ্র। তবে ২০১৪ সালে তিনি বীরভূম জেলায় সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা যক্ষ্মা আধিকারিকের দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুরে তিন মাস প্রশিক্ষণ পর্বে যক্ষ্মার কাজ সামলেছেন ভুবন। অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি জেলায় সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের পাশাপাশি যক্ষ্মা আধিকিারিক হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন শুভদীপ। ওই সময় জলপাইগুড়িতে ডিস্ট্রিক মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ অফিসার (ডিএমসিএইচও) ছিলেন ভুবন। সেখানে ভুবন ও শুভদীপের একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কালক্রমে ঝাড়গ্রামের ভুবন ও শুভদীপ দু’জনেই এখন ঝাড়গ্রামে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে এ জেলায় কোনও যক্ষ্মা আধিকারিক নেই। কিন্তু শুভদীপ জেলায় আসতেই গত বছরই তাঁকে যক্ষ্মার অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে দেন ভুবন। তার পরই শুরু হয় ভুবন-শুভদীপের জুটির কাজ। এই জুটির কাজে মৃত্যুর হার ৪ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি একশো শতাংশ যক্ষ্মা রোগীকে নিক্ষয় মিত্র কর্মসূচিতে আনা সম্ভব হয়েছে।
২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় ১৭৯৮ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছেন। যক্ষ্মা রোগীকে পুষ্টিযুক্ত খাবার দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নিক্ষয় পোষণ যোজনা’ রয়েছে। এই প্রকল্পে এককালীন ৩০০০ টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়। তার পরও অতিরিক্ত পুষ্টির জোগান দিতে রয়েছে ‘নিক্ষয় মিত্র’ কর্মসূচি। এ ক্ষেত্রে কোনও এক যক্ষ্মা রোগীর পুষ্টিকর খাবার জোগান দেওয়ার দায়িত্ব নিতে পারেন কোনও সহৃদয়। জানা গিয়েছে, ভুবন ও শুভদীপ দু’জনেই যক্ষ্মা রোগীর দায়িত্ব নিয়েছেন। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ১৯৯৯ ব্যাচের সাতজন প্রাক্তনী ঝাড়গ্রামে সাতজন যক্ষ্মা রোগীর দায়িত্ব নিয়েছেন শুভদীপের হাত ধরে।
জেলা পরিষদের জন স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সঞ্চিতা ঘোষ ১৭৭ জন রোগী দায়িত্ব নিয়েছেন। আবার সুজাতা ভট্টাচার্য নামে এক শিক্ষিকা ঝাড়গ্রাম সংশোধনাগারের এক যক্ষ্মা রোগীর দায়িত্ব নিয়েছেন। রবিবার বিনপুরের বিধায়ক দেবনাথ হাঁসদা ২০ জন যক্ষা রোগীর দায়িত্ব নিয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিয়েছেন। শুভদীপ বলছেন, ‘‘জলপাইগুড়িতে যক্ষ্মার কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। ওই সময় স্যরের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছি। ঝাড়গ্রামে ১০০ শতাংশ নিক্ষয় মিত্রর পাশাপাশি মৃত্যুর হার অনেকটা কমেছে।’’