Underage Pregnancy

এক বছরে অন্তঃসত্ত্বা প্রায় ১১ হাজার নাবালিকা

জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত এই জেলায় ১০,৭৫৫ জন নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে।

Advertisement
বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ১০:৩২
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

প্রসূতির বয়স মাত্র ১৬। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলেন তার পরিজনেরা। প্রসূতির খিঁচুনি উঠছে। তাকে বাঁচিয়ে রাখাই তখন চিকিৎসকদের কাছে চ্যালেঞ্জ। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হল। কিছুটা বিপদমুক্ত করে কিশোরীকে তোলা হল অপারেশন থিয়েটারে। সিজার হল। পুত্রসন্তানের জন্ম দিল নাবালিকা। তার বিপদ কাটল না। সদ্যোজাতের ওজনও খুব কম। দিন কয়েক চিকিৎসাধীন থাকার পরে নাবালিকার অবস্থা স্থিতিশীল হয়। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি হাসপাতালের।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা সে ভাবে কমছে না। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত এই জেলায় ১০,৭৫৫ জন নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। জেলায় প্রসূতি সংখ্যার নিরিখে নাবালিকা প্রসূতি ১৯.৫ শতাংশ। অর্থাৎ, জেলায় ১০০ জন প্রসব করলে, তার মধ্যে গড়ে প্রায় ২০ জনই নাবালিকা। যাদের বয়স ১৮-র কম। জেলা প্রশাসনের ওই সূত্রের অবশ্য দাবি, ধীরে ধীরে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা কমছে। এখন যেটা ১৯.৫ শতাংশ, বছর দুয়েক আগেও সেটা ছিল প্রায় ২১ শতাংশ। অর্থাৎ, দু’বছরে ১.৫ শতাংশ কমেছে। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহ আটকাতে নিচুস্তর পর্যন্ত পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নাবালিকাদের গর্ভধারণের ঝুঁকি সম্পর্কেও সচেতন করা হচ্ছে।’’ বাল্যবিবাহ রোধে কন্যাশ্রী-রূপশ্রীর মতো প্রকল্পের নিবিড় প্রচার চালানো হচ্ছে বলেও জেলা প্রশাসনের দাবি।

চিকিৎসকরা বলছেন, অল্প বয়সে মাতৃত্বে নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে। কেমন? যেমন, বয়স অল্প হলে প্রসূতির শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। মৃত্যু হতে পারে। তাঁর শিশুর মৃত্যু হতে পারে। শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে পারে। জেলার প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, বাল্যবিবাহ রোধ থেকে অল্প বয়সে মাতৃত্ব রোধ-নানা বিষয় নিয়েই ছাত্রীদের সচেতন করা হচ্ছে। স্কুলে স্কুলে শিবির হচ্ছে। বস্তুত, বাল্যবিবাহ ও অল্প বয়সে মাতৃত্ব— দুই সমস্যাই পশ্চিম মেদিনীপুরে রয়েছে। চেষ্টা করেও নাবালিকা মায়ের সংখ্যা সে ভাবে কমানো যাচ্ছে না জেলায়। কারণ, বাল্যবিবাহ সে ভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না।

জেলার ২১টি ব্লকের মধ্যে ৯টিতে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা তুলনায় বেশি। ওই ব্লকগুলি হল শালবনি, খড়্গপুর- ১, গড়বেতা- ১ (গড়বেতা), গড়বেতা- ২ (গোয়ালতোড়), গড়বেতা- ৩ (চন্দ্রকোনা রোড), চন্দ্রকোনা- ১, চন্দ্রকোনা- ২, কেশিয়াড়ি, সবং। এই সব ব্লকে প্রসূতি সংখ্যার নিরিখে নাবালিকা প্রসূতি ২০ শতাংশের বেশি। নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি গড়বেতা- ৩ ব্লকে। শতাংশের নিরিখে ২৬.৯ শতাংশ! জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ঠেকাতে সচেতনতামূলক প্রচার চলছে।’’

জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ২০২২ এর এপ্রিল থেকে ২০২৩ এর মার্চ পর্যন্ত (১২ মাসে) জেলায় ৬১,০১৬ জন প্রসব করেছিলেন। এরমধ্যে ১২,৫১৫ জনই ছিল নাবালিকা। যাদের বয়স ১৮-র কম। শতাংশের নিরিখে ২০.৫ শতাংশ প্রসূতি ছিল নাবালিকা। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়া, এটা একটা সামাজিক সমস্যা। কিছু এলাকায় এই সমস্যা বেশি। এই সামাজিক সমস্যার জট অনেক গভীরে। তাই সমস্যা মেটাতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সচেতনতা প্রচার চলছে। প্রচারে সাড়া মেলায় নাবালিকা গর্ভধারণের হার কমছে। প্রচারের সুফল পুরোপুরি পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।’’ তিনি মানছেন, ‘‘বেশ কয়েকটি ব্লকে নাবালিকা গর্ভধারণের হার তুলনায় বেশি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই ব্লকগুলির ক্ষেত্রে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচার আরও নিবিড়ভাবে করা হবে।’’

জেলা প্রশাসনের আর এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নাবালিকা বিয়ের কুফল প্রচার করা হচ্ছে। জেলার কোন কোন এলাকায় বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেশি, ইতিমধ্যেই এমন কিছু এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এলাকাওয়াড়ি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement