Madhyamik Exam 2024

আঁধার ঠেলেই আলোর পথযাত্রী

পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। প্রেমজিতের মাধ্যমিকের ফল অবশ্য উজ্জ্বল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬০১। শতাংশের নিরিখে ৮৫.৮৫ শতাংশ।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৪ ০৯:২৩
বাবার সঙ্গে প্রেমজিৎ।

বাবার সঙ্গে প্রেমজিৎ। নিজস্ব চিত্র।

বাধা যেন প্রতিপদে!

Advertisement

মা নেই। বাবা ভিক্ষা করেন। অভাবের সংসার। তারপর আবার দু’চোখেও আঁধার পড়ুয়ার। তবে কোনও বাধাকেই গ্রাহ্য করেনি সে। আধ-পেটা খেয়েও পড়াশোনা চালিয়ে এসেছে সাফল্য। মাধ্যমিকে প্রায় ৮৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছে প্রেমজিৎ সাউ। দৃষ্টিহীন প্রেমজিৎ শালবনির পিড়াকাটা হাই স্কুলের ছাত্র। তার বাড়ি পিড়াকাটার কিছু দূরে মালিদায়। বড় হয়ে ডব্লিউবিসিএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখে প্রেমজিৎ। তার কথায়, ‘‘ইচ্ছে রয়েছে ডব্লিউবিসিএস অফিসার হওয়ার। আর্থিক অবস্থা তো ভাল নয়। দেখি কতদূর কী হয়!’’

পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। প্রেমজিতের মাধ্যমিকের ফল অবশ্য উজ্জ্বল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬০১। শতাংশের নিরিখে ৮৫.৮৫ শতাংশ। বাংলায় পেয়েছে ৮৭, ইংরেজিতে ৮৩, অঙ্কে ৯৩, ভৌতবিজ্ঞানে ৮২, জীবনবিজ্ঞানে ৮৬, ইতিহাসে ৮০, ভূগোলে ৯০। সার্বিক ভাবে গ্রেড ‘এ-প্লাস’। পরিবারের জমিজমা নেই। বাবা সন্দীপ সাউ ভিক্ষা করে সংসার চালান। মা ববিতা সাউ মারা গিয়েছেন বছর সাতেক আগে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়। আর প্রেমজিতেরা দু’ভাই। প্রেমজিৎই বড়। তার ভাই দেবপ্রিয় সাউ নবম শ্রেণিতে পড়ে। প্রেমজিতের মাধ্যমিকের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল কলসিভাঙ্গা হাইস্কুল। কী ভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াত করবে সে, চিন্তা ছিল। সব দেখে তার যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। উদ্যোগী হয়েছিল পর্ষদ। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের জেলা মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক শুভেন্দু গুঁইন বলেন, ‘‘ওর যাতায়াতের জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই রকম একটি ছেলের পাশে থাকতে পেরে ভাল লাগছে।’’

পিড়াকাটা হাই স্কুলেই কলা বিভাগে ভর্তি হয়েছে দৃষ্টিহীন ছেলেটি। প্রেমজিৎ বলছিল, ‘‘আমরা দুই ভাই চোখে দেখতে পাই না। জন্ম থেকেই এই সমস্যা। কম আলোয় দেখতে পাই না। খুব বেশি আলোয় দেখতে পাই না।’’ তার কথায়, ‘‘আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। বাবা ভিক্ষা করে সংসার চালায়। জমি নেই। তাই চাষও নেই। বছর সাতেক আগে মা রান্না করতে করতে আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছেন। মনে জোর রেখে পড়াশোনা করছি।’’ ছোট ঘর। সেখানে থেকেই লড়াই চালিয়ে যাওয়া। প্রেমজিতের কথায়, ‘‘শুধু ছোটই নয়, ঘরটা ভাঙাচোরাও। ভাঙা ঘর, দমকা ঝড় হলেই পড়ে যাবে হয়তো। আবাস যোজনার ঘরটা অর্ধেকটা হয়ে পড়ে আছে। বাকি টাকা আসেনি।’’ পরবর্তী সময়ে কী ভাবে ছেলের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাবেন, সে চিন্তা রয়েছে সন্দীপের। দৃষ্টিহীন প্রেমজিতের কথায়, ‘‘পড়াশোনার খরচ সামলাব, সেটাও ভাবছি। যদি সরকারি বা বেসরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা কিছু না পাই, তা হলে
সত্যিই সমস্যা।’’

দৃষ্টিহারা ছেলেটির মাধ্যমিকের এমন ফল দেখে আপ্লুত গ্রামবাসী। তার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অতনু মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘ওর এমন সাফল্যে আমরা খুব খুশি। আপ্লুতও। ছেলেটি পড়াশোনার ব্যাপারে ভীষণই উৎসাহী। মনের জোর আর ইচ্ছেশক্তি থাকলে কোনও বাধাই সাফল্যের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে না। ওর এমন ফলাফলে সেটা আরও একবার স্পষ্ট হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement