পিংলা পট গ্রাম। —নিজস্ব চিত্র।
পর্যটন তো আর শুধু ঘুরে বেড়ানো নয়। দর্শনীয় স্থান দেখার পাশাপাশি স্থানিক ইতিহাস ও লোকায়ত শিল্পের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগও বটে। পর্যটনকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে হয়তো আরও কিছুটা লক্ষ্মী লাভ হতো। আখেরে যা ইতিহাস ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে কাজে লাগত।
ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে পর্যটনকে মিশিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা হয়েছিল ঝাড়গ্রাম জেলায়। তবে তার প্রসার হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষেত্রে এমন উদ্যোগ দেখা গিয়েছে একমাত্র পিংলায়। অথচ এই সুযোগ দুই জেলায় রয়েছে।
প্রথমে দেখা যাক সরকারি স্তরে কী চেষ্টা হয়েছিল। বেলপাহাড়ির শিমূলপাল অঞ্চলের পাথরশিল্পীদের শিল্পকর্ম সরকারি উদ্যোগে বিপণনের ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, সেই উদ্যোগের প্রসার ঘটেনি। স্থানীয় মেলায় শিল্পীরা শিল্পকর্ম বিক্রি করেন নামমাত্র দামে। পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদ ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে বাঁদনা পরব উদযাপনের নজির রয়েছে ঝাড়গ্রামে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়ায় সরকারি অর্থ সাহায্য নিয়ে পটচিত্র বিস্তারের কাজ শুরু করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এখন আক্ষরিক ভাবেই তা আর্ন্তজাতিক খ্যাতি পেয়েছে। বছর ভর রাজ্যের নানা জায়গা তো বটেই দেশ বা বিদেশের লোকদের আনাগোনা থাকে এই গ্রামে। বেশ কয়েকবছর আগে থেকেই নয়াতে থাকার জন্য নানা ব্যবস্থা আছে। গ্রামের কেন্দ্রে পটচিত্রের রিসোর্স সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বিদেশিদের থাকার কথা ভেবেই এই ঘর বানানো হয়েছে। আছে খাবার আয়োজনও। পাশাপাশি এখানে বড়ো হল ঘর রয়েছে। সেখানেও দল বেঁধে রাত কাটাতে পারেন পর্যটকেরা। বাহাদুর চিত্রকর ও জুলফিকার চিত্রকর নিজেদের উদ্যোগে নিজেদের বাড়িতে হোম স্টে করেছেন। নয়ার পাশেই এক অসরকারি লজ ও হয়েছে। বাহাদুর জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ সময়েই হোম স্টে ভর্তি থাকে। দিন দিন নয়াতে লোক আসা বাড়ছেই। তাদের কেউ যেমন পটচিত্রের গ্রাম দেখতে আসেন, তেমনই পট নিয়ে গবেষণা করছেন এমন ব্যক্তিরাও হামেশাই আসেন। কেউ আসেন নগরের কোলাহল থেকে নিস্তার পেতে এক দু দিন লোক শিল্পের গ্রামে সময় কাটাতে।সাংস্কৃতিক স্তরে যা কিছু সংগঠিত প্রচেষ্টা ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রে তা হয়েছে বেসরকারি উদ্যোগের হাত ধরে।
(তথ্য: কিংশুক গুপ্ত, কিংশুক আইচ, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য)