School Uniform Problems

স্কুলের পোশাকের বেআইনি ব্যবসা, অভিযুক্ত পার্শ্বশিক্ষক

সরকারি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুল পড়ুয়াদের নীল- সাদা পোশাক দেয় রাজ্য সরকার। পোশাক তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে বরাত দেওয়া হয়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৪
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

থরে থরে সাজানো রয়েছে নীল-সাদা রঙের স্কুলের পোশাক। গোটা বারান্দা ভর্তি হয়ে রয়েছে সেই পোশাকে! আবাস যোজনার সমীক্ষা করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ সমীক্ষকদের। সাধারণ গৃহস্থ বাড়িতে কোথা থেকে এল এত পোশাক? সদুত্তর দিতে না পারায় ওই বাড়ির বাসিন্দা এক পার্শ্বশিক্ষক ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন খোদ কাঁথি-৩ এর বিডিও দীপক কুমার ঘোষ। তবে অভিযুক্তেরা পলাতক।

Advertisement

ঘটনাটি কাঁথি-৩ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত মারিশদার। অভিযুক্ত তাপস গাঁতাত ও প্রদীপ গাঁতাত জামুয়া শঙ্করপুরের বাসিন্দা। এঁদের মধ্যে তাপস ওই গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক। তিনি সপরিবারে মাটির বাড়িতে থাকেন। বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে আবাসের সমীক্ষায় যান প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। আবাস প্রাপকের তালিকায় তাপসের নাম ছিল। যদিও খসড়া তালিকায় বাদ পড়েছেন তিনি। এরপর তিনি ঘর চেয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান।

সরকারি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুল পড়ুয়াদের নীল- সাদা পোশাক দেয় রাজ্য সরকার। পোশাক তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে বরাত দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ২০২২ সালের ১০ মার্চ একটি নির্দেশিকা জারি করেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্য সচিব। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে আরও একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য সরকার।

সেই সব নির্দেশ অমান্য করে ওই পার্শ্বশিক্ষকের বাড়িতে বেআইনিভাবে স্কুলের পোশাক তৈরি করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভিযুক্তের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। ১৩ বস্তা পোশাক বাজেয়াপ্ত করা হয়। বাড়ির বাসিন্দাদের প্রত্যেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

অভিযুক্ত পার্শ্বশিক্ষক তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজের 'ঘনিষ্ঠ' বলে দাবি। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের অভিযোগ, "স্কুলের পোশাকও দলের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে সরিয়ে রেখে দিচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা। এর চেয়ে লজ্জার ঘটনা কিছু হতে পারে না।" তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি বিকাশ বেজের কথায়, ‘‘তাপস বিরোধী রাজনীতি করতেন। কিছুদিন আগে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। শুনেছি রামনগরের কোনও একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছ থেকে বরাত নিয়ে এসে জামা প্যান্ট তৈরি করতেন। সরকারি প্রকল্প নিয়ে কোনও বেনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ করছে।"

এ দিন কাঁথি -৩ ব্লকের যুগ্ম সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক প্রসেনজিৎ নন্দীর নেতৃত্বে ব্লক প্রশাসনের এক প্রতিনিধি দল তাপসের বাড়ি আবাস যোজনার পরিদর্শনে যান। সে সময় তাঁদের নজরে আসে, তাপসের বাড়ির বারান্দায় ৩৫-৪০টি বস্তা রয়েছে। বস্তায় কী আছে জানতে চাওয়ায় হলে তাপসের বাবা স্বপন গাঁতাত জানান, তাঁর ছেলে এইসব পোশাক তৈরি করে বিভিন্ন স্কুলে সরবরাহ করেন। প্রাথমিক এবং হাই স্কুল মিলিয়ে ৭০ টি স্কুলের পড়ুয়াদের পোশাক তৈরি করা হয়। সব শুনে যুগ্ম সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের নেতৃত্বে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা ফিরে যান। তার পরই মারিশদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বিডিও দীপক কুমার ঘোষ। তিনি বলেন, "একটি নির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন