Nandigram

ধাক্কা নন্দীগ্রামে, তবুও সমবায়ে ক্ষমতায় তৃণমূল

লোকসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের বিপুল জয়ের মধ্যেও পূর্ব মেদিনীপুরের দুই কেন্দ্রে হারে জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের ভূমিকায় প্রশ্ন ওঠে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০৩
মথুরী কল্যানিকা বিদ্যাভবন কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছন এক ভোটার।

মথুরী কল্যানিকা বিদ্যাভবন কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছন এক ভোটার। নিজস্ব চিত্র।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিধানসভা এলাকা নন্দীগ্রাম ধাক্কা খেলেও তমলুক সমবায় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ণ ব্যাঙ্কের ক্ষমতা ধরে রাখল তৃণমূল। গত কয়েক সপ্তাহ শাসক-বিরোধী শিবিরকে এই সমবায় জয়ের জন্য নানা অঙ্ক কষতে দেখা গিয়েছে। রবিবার ছিল ভোটগ্রহণ। এ দিন ঘিরে তমলুক ও হলদিয়া মহকুমার সমস্ত ব্লকে টানটান উত্তেজনা ছিল। দিনের শেষে দেখা গিয়েছে, ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির ৬৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৫৬টি পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতায় ফের ক্ষমতা দখল করেছে। আর নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সাতটি আসনের সাতটি এবং নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের সাতটি আসনের মধ্যে ছ’টিতে বিজেপি সমর্থিতরা জয়ী হয়েছেন।

Advertisement

চলতি বছরে লোকসভা ভোটে তমলুক ও কাঁথি কেন্দ্রে তৃণমূলকে হারিয়ে জিতেছিল বিজেপি। লোকসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের বিপুল জয়ের মধ্যেও পূর্ব মেদিনীপুরের দুই কেন্দ্রে হারে জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের ভূমিকায় প্রশ্ন ওঠে। তাই তমলুক সমবায় কৃষি-গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক এবং কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচন জিততে মরিয়া হন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। ভোট প্রচারে বিভিন্ন ব্লকের নেতৃত্ব মাঠে নেমেছিলেন। জেলার বিধায়কদের কলকাতায় ডেকে বৈঠক করেছেন সুব্রত বক্সী। এ দিনও সকাল থেকে তৃণমূলের জেলা (তমলুক) সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক, তমলুকের বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র, নন্দকুমারের বিধায়ক সুকুমার দে এবং মহিষাদলের বিধায়ক তিলক চক্রবর্তীকে আসরে নামতে দেখা গিয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে দলীয় শিবিরে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামে এবং ময়নার বিধায়ক অশোক দিন্দা তমলুক ব্লকের ভোট কেন্দ্রে যান।

তমলুক কৃষি-গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কের আওতাধীন তমলুক ও হলদিয়া মহকুমার ১২টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটার ছিল প্রায় ৫৫ হাজার। নন্দীগ্রাম এবং কোলাঘাটে উত্তেজনা ছাড়া বড় কোনও অশান্তি ঘটেনি। দুপুরের মধ্যেই গণনা শুরু হয়ে যায়। বিকেলে তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, সুতাহাটা, মহিষাদল, হলদিয়ার বিভিন্ন ব্লকে ফলাফল প্রকাশ হয়ে যায়। তাতেই তৃণমূলের সমবায় দখলের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়। সন্ধ্যায় সামগ্রিক ফল প্রকাশ পায়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অসিত বলেন, ‘‘এই ভোটের জয় প্রমাণ করেছে জেলাবাসী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই ভরসা রাখেন। তাঁরা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অপপ্রচারের জবাব দিয়েছেন।’’

উল্লেখ্য, রাজ্যে পালাবদলের আগেই ২০১০ সালে তমলুক সমবায় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ণ ব্যাঙ্কে ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। ২০১৮ সালে নির্বাচন হলেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারা জেতে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে রাজ্য সরকার মনোনীত পরিচালন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে ছিলেন তৃণমূল নেতা সত্যরঞ্জন সাহু। এবারও চণ্ডীপুর ব্লকের একটি আসনে প্রার্থী হয়ে লড়াই করেছিলেন তিনি। অন্যদিকে, বিরোধী হিসাবে বিজেপি ও বামফ্রন্টের সমর্থিত প্রার্থীরা লড়াই করেছিলেন। মোট ৬৯ টি আসনের ৬৯ টিতেই তৃণমূল ও বিজেপি এবং ৫২ টি আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থীরা লড়াই করেছিলেন। আর এতে তৃণমূলের ৫৪ জন প্রার্থীর জয় হয়েছে ।

সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে হারের কারণ প্রসঙ্গে নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা তথা সমবায় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘সমবায় ব্যাঙ্ক নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রগুলি এমন জায়গায় করা হয়েছে, যেখানে ভোটারদের যাতায়াতের অসুবিধার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলার সমস্যার আশঙ্কা ছিল। সমবায় ব্যাঙ্কের ভোটারদের অধিকাংশই গ্রামের বয়স্ক বাসিন্দা। ফলে ঝামেলা এড়াতে অনেক বয়স্ক কেন্দ্রে যেতে চাননি। আর নন্দীগ্রামের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে তৃণমূলের সন্ত্রাস হয়েছে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন