Delhi Cholo by Abhishek Banerjee

ডাক মেলেনি ‘দিল্লি চলো’য়, হতাশা বাড়ছে মানিকপাড়ায়

২০২১ সালে ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গোদারাস্তা মৌজায় ২৭ একর রুক্ষ জমিকে উপযোগী করে বাগান তৈরি করে সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন করা হয়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৫
গোদারাস্তা মৌজায় ফলের বাগান।

গোদারাস্তা মৌজায় ফলের বাগান। —নিজস্ব চিত্র।

একশো দিনের বকেয়া মজুরির দাবিতে গান্ধী জয়ন্তীতে ‘দিল্লি চলো’র ডাক দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলায়। জেলার ৮টি ব্লক থেকে ১৮০ জন জবকার্ডধারীকে (২-৩ অক্টোবর) দিল্লি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করছে জেলা তৃণমূল। অথচ সেই তালিকায় নাম নেই ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া অঞ্চলের ২২০টি পরিবারের কারওই, যাঁরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে রুক্ষ জমিতে বহুমুখী ফলের বাগান করেছিলেন। বছর দু’য়েক আগে কাজ করেও মজুরি পাননি ওই পরিবারের সদস্যরা। দিল্লি চলোর কর্মসূচিতে তাঁদের কোনও প্রতিনিধি ডাক না পাওয়ায় পরিবারগুলির মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

Advertisement

২০২১ সালে ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গোদারাস্তা মৌজায় ২৭ একর রুক্ষ জমিকে উপযোগী করে বাগান তৈরি করে সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন করা হয়। ৩৪ জন স্থানীয় চাষিদের নিয়ে তৈরি হয় একটি সমবায়। প্রকল্পটি ওই সমবায়ের মাধ্যমে দেখভাল করা হচ্ছে। মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্বশোল, লালগেড়িয়া, গোদারাস্তা, বড়বাড়ির মত এলাকার বিভিন্ন গ্রামের যে সব পরিবার জমির মাটি তৈরি করে গাছ রোপণের জন্য গর্ত খুঁড়েছিলেন, বাগান করেছিলেন, কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের কারণে তাঁরা মজুরি পাননি। বাগানটি পরিদর্শন করে প্রশংসা করে গিয়েছিলেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা।
একশো দিনের প্রকল্পে ওই কাজের সুপার ভাইজ়ার শ্যামাপদ মাহাতো জানান, ২০২১ সালের গোড়ায় জমি সমতলীকরণের কাজ শুরু হয়। তার পরে আম, পেয়ারা, ড্রাগন ফল, বেদানা, লেবু, কুল-সহ নানা ফলের গাছের চারা রোপণ করা হয়। পেয়ারা ও লেবু গাছে ফলও ধরেছে। এলাকার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় তিনশো পরিবার পর্যায়ক্রমে কাজ করেছেন। ২০২১ সালে কিছু শ্রমিকের মজুরি মেটানো হয়। এখনও ২২০ জনের মজুরি বাকি রয়েছে। সুপারভাইজারের কাজ করে শ্যামাপদ নিজেও মজুরি পাননি। প্রকল্পে কাজ করে মজুরি না পাওয়া জ্যোৎস্না মাহাতো, সরস্বতী মাহাতো, হরেন মাহাতো, মহাদেব মাহাতো বলছেন, ‘‘কাজ করে বাগান তৈরি করে ফেললাম। অথচ হকের মজুরি পেলাম না। আমাদের কথা বলার জন্য আমাদের মধ্য থেকে কাউকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে কি-না সেটাই বুঝতে পারছি না।’’

গোদারাস্তা মৌজার ওই বাগানে মাথা তুলেছে ড্রাগন ফলের গাছ, পাতি লেবু গাছ, পেয়ারা গাছ, বেদানা গাছ, আমগাছ, মৌসম্বি লেবু গাছ, কুলগাছ, কাজু গাছ। সব মিলিয়ে গাছের সংখ্যা কয়েক হাজার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাগানের শুকনো আগাছায় আগুন লেগে কিছু গাছের ক্ষতি হয়েছিল। পরে অবশ্য বাগান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমবায়ের সদস্যরা নিয়মিত পরিচর্যায় বাগানটিকে আগের চেহারায় ফিরিয়েছেন। শ্যামাপদ বলছেন, আগুনে কিছু ড্রাগন ফলের গাছ নষ্ট হয়েছিল। বর্ষার জলে বাদ বাকি গাছ সতেজ হয়ে বেড়ে উঠেছে। শ্যামাপদ নিজে তৃণমূল করেন। স্থানীয় লালগেড়িয়া বুথের দলীয় সভাপতিও তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চাই দল অন্তত বাগানের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনকে দিল্লি নিয়ে যাক। ভাল কাজ করেও মজুরি না পেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলির কি অবস্থা সেটা ওই সমাবেশ থেকে সারা দেশ দেখুক! কিন্তু দিল্লি যাওয়ার জন্য আমাদের কাউকেই বলা হয়নি।’’

জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের জেলা থেকে ১৮০ জন জবকার্ডধারীকে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে সবাইকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’’ দুলাল জানান, জেলার ৮টি ব্লকের মধ্যে গোপীবল্লভপুর-১ ও জামবনি ব্লক থেকে ৩০ জন করে যাবেন। বাকি ব্লক গুলি থেকে ২০ জন করে যাবেন।

আরও পড়ুন
Advertisement