টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ। নিজস্ব চিত্র।
একটি সমবায় নির্বাচন। সেই নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসতেই হিংসা জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে। মৃত্যু হল এক তৃণমূল কর্মীর। ঘটনাপ্রবাহ এমন সময়ের, যখন জেলা সফরে আসছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কন্টাই কো-অপারেটিভের নির্বাচন, জগন্নাথ মন্দিরের পরিদর্শন বা মন্দারমণির বেআইনি নির্মাণকারী হোটেল মালিকদের সঙ্গে আলোচনার মতো তৃণমূল নেত্রীর নানা কর্মসূচির সম্ভবনার কথা শোনা গিয়েছে। এখন তাঁর দলের কর্মীর মৃত্যুতে তিনি নন্দীগ্রামে যান কি না, সেই নজর রয়েছে জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘরের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। পাশাপাশি, তাঁরা অভিযোগ করছেন, নন্দীগ্রামে নিজের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা করছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা স্থানীয় বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। আর সেই জন্য বারবার রক্ত ঝরছে ওই এলাকায়।
ররিবার তমলুক সমবায় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ণ ব্যাঙ্কের নির্বাচন ছিল। সেখানের পরিচালন সমিতির ৬৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৫৬টি পেয়েছে। আর নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সাতটি আসনের সাতটি এবং নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের সাতটি আসনের মধ্যে ছ’টিতে বিজেপি সমর্থিতরা জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনের সময়ই কাঞ্চননগর দিদারুদ্দিন হাইস্কুল এলাকায় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে জড়ায়। পরে নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের কালীচরণপুর পঞ্চায়েতের ৭ নম্বর জালপাই বুথ এলাকায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি গুরুপদ মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে বিজেপি কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। গুরুপদের ভাই বিষ্ণুপদ মণ্ডল দাদাকে বাঁচাতে এলে তাঁকে ধারাল অস্ত্র নিয়ে আঘাত করা হয়। বিষ্ণুপদকে তাম্রলিপ্ত মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানেই তৃণমূল কর্মী বিষ্ণুপদর মৃত্যু হয়।
তৃণমূলের অভিযোগ, এই হিংসার পিছনে রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর গোপন অভিসন্ধি। আর তা হল, নন্দীগ্রামে প্রতিযোগিতাহীন একক ক্ষমতা! শুধু শাসকদল নয়, আদি বিজেপি কর্মীদের একাংশেরও দাবি, হিংসা দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে নব্য বিজেপি। আর তাতে বিরোধী দলনেতার মদতও রয়েছে বলে অভিযোগ।
আবার তৃণমূলের দাবি, কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচন শুভেন্দু অধিকারী কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই। মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে এসে যাতে ওই নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা না করেন তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় ব্যস্ত হন, সে জন্যই এই পরিকল্পিত খুন বলে দাবি। নন্দীগ্রামে তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী বরাবরই খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সিপিএমের হার্মাদদের নিয়ে তৃণমূলের উপর আক্রমণ করছে। নন্দীগ্রামবাসী সেটা বুঝতে পারছেন। যে হার্মাদের বিরুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারী আন্দোলন করেছিলেন, সেই হার্মাদরাই ওঁর সম্পদে পরিণত হয়েছে।’’ যদিও বিজেপি জেলা (তমলুক) সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলছেন, ‘‘তৃণমূল এখন সব সময় শুভেন্দু ভূত দেখছে। ওঁকে ভয় পাচ্ছে তৃণমূল। রবিবারের রাতের পারিবারিক বিবাদকে রাজনৈতিক রং দিচ্ছে।’’
এদিকে, বাংলাদেশের বিষয়ে সম্প্রতি জেলায় মিছিল করে সুর চড়িয়েছেন বিরোধী দলনেতা। মঙ্গলবার সেই শুভেন্দুর জেলায় তিনদিনের সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ নিয়ে কিছু বলেন কি না, সে নিয়েও নজর রয়েছে। তবে বাংলাদেশ বিষয়ে তাঁর সরাসরি কোনও কর্মসূচি নেই বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলছেন, ‘‘সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ নিয়ে নিজের বিবৃতি জানিয়েছেন। দলের তরফে বারবার কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের প্রতি সমর্থনের কথা জানানো হয়েছে।’’