Midnapore

‘ভুল ঠিকানা’র মাসুল! জামিন পেয়েও মেদিনীপুর জেলে ছ’বছর কাটালেন ঝাড়খণ্ডের মহিলা

২০১৭ সালে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ঝাড়খণ্ডের পলামু জেলার বাসিন্দা নলিনী। পরিবারের দাবি, মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। অবশেষে মেদিনীপুরের জেলে খোঁজ পাওয়া যায় ওই মহিলার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৩৩
স্বামীর সঙ্গে নলিনী চৌধরি।

স্বামীর সঙ্গে নলিনী চৌধরি। —নিজস্ব চিত্র।

সীমানা পেরিয়ে প্রবেশ করেছিলেন এ রাজ্যে। তার পর অজ্ঞাতসারেই ঢুকে পড়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুন্ডা বিমানঘাঁটিতে! সেই অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হন। তবে এক বছর পরে আদালতের নির্দেশে জামিনও পেয়েছিলেন। কিন্তু ঠিকানা ভ্রমের কারণে ছ’বছর সংশোধনাগারেই থাকতে হয় তাঁকে। অবশেষে জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে গ্রেফতারির সাত বছর পর নিজের স্বামী-সংসার খুঁজে পেলেন নলিনী চৌধরি নামে ওই মহিলা।

Advertisement

২০১৭ সালে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ঝাড়খণ্ডের পালামু জেলার চেইনপুর থানার কর্মাহা গ্রামের বাসিন্দা নলিনী। পরিবারের দাবি, মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সেই সময় স্থানীয় থানায় স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার ডায়েরি লিখিয়েছিলেন নলিনীর স্বামী লালজি চৌধরি। কিন্তু বছরের পর বছর স্ত্রীর কোনও খোঁজই পাননি। বার বার থানায় গিয়ে খবর নিয়েছেন, কিন্তু সন্ধান পাননি নলিনীর। দিন কয়েক আগেই তিনি জানতে পারেন, তাঁর স্ত্রী রয়েছেন মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনগারে। তাঁকে তাঁর স্ত্রীর ছবিও পাঠানো হয়। ছবি দেখে চিনতে পেরেই স্ত্রীকে নিতে মেদিনীপুরে আসেন লালজি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলাইকুন্ডা বিমানঘাঁটিতে প্রবেশের অভিযোগে ২০১৭ সালে যখন নলিনীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তখন খড়্গপুর পুলিশের খাতায় তাঁর বাড়ির ঠিকানা লেখা ছিল উত্তরপ্রদেশ! তাতেই গোল বাধে। ২০১৮ সালে আদালত থেকে জামিন পান নলিনী। কিন্তু তার পরেও জেলমুক্তি হয়নি তাঁর। আদালত ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেছিল। তবে বন্ডের সেই অর্থ জমা না-পড়ায় মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনগারেই থাকতে হয়েছিল তাঁকে।

জামিনের অর্থের জন্য বার বার নলিনীর দেওয়া ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েও লাভ হয়নি। আসেনি কোনও উত্তর। মাস দুই আগে মেদিনীপুরের জেলা আইনি পরিষেবা দফতরের সচিবের দায়িত্ব নেন শাহিদ পারভেজ়। তাঁর কাছে খবর আসে নলিনীর।

নভেম্বর মাসে জেলে নলিনীর সঙ্গে দেখা করতে যান শাহিদ। ১০ মিনিট কথা বলে তিনি। শাহিদ জানান, কথা বলার সময়ই নলিনী তাঁকে বাড়ির ঠিকানা এবং স্বামীর নাম বলেন। তার পরেই সেই ঠিকানা নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করেন শাহিদ। অনেক চেষ্টার পর তিনি জানতে পারেন, নলিনীর বাড়ি উত্তরপ্রদেশে নয়, ঝাড়খণ্ডে! তার পরই সেখানকার স্থানীয় জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই সূত্র ধরেই লালজির খোঁজ মেলে। তার পর তাঁকে নলিনীর ছবি পাঠানো হয়। ছবি দেখে চিনতে পেরে নিজের স্ত্রীকে চিনতে পারেন লালজি। সপরিবার মেদিনীপুর চলে আসেন তিনি। লালজির কথায়, ‘‘ছবি দেখে চিনতে পেরেই স্ত্রীকে নিতে এসেছি। সেই ২০১৭ সাল থেকে খুঁজছি। অবশেষে খোঁজ পেলাম। মানসিক সমস্যায় ভুগছিল নলিনী।’’

নলিনীর ভাই সত্যেন্দ্রও এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আধার কার্ডে আমার দিদির নাম নিয়েও সমস্যা হয়। নলিনী নাম হলেও আধার কার্ডে লেখা ছিল লালনী দেবী। তবে দিদিকে এত দিন পর বাড়ি নিয়ে যেতে পারব, তাতেই খুশি।’’

Advertisement
আরও পড়ুন