Elephants Attack

পরিকল্পনার অভাব! প্রাণ গেল মানুষ ও হাতির

দিনভর মানুষজন কমেনি, উল্টে বেড়েছে। বিকেলের পর থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। হুলা পার্টির দল হুলা জ্বালিয়ে হাতিকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৭
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

স্বাধীনতা দিবসে হাতির দল নিয়ে হুলুস্থুল অরণ্যশহরে। দিনভর চার দেওয়ালের মাঝে বন্দি হয়ে রইল হাতির দল। প্রাণ গেল মানুষ ও হাতির। ওই ঘটনায় বন দফতরের ভূমিকা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ভোরে ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ এলাকার ধরমপুর হয়ে হাতির দলটি ঢুকে পড়ে ঝাড়গ্রাম শহরে। প্রথমে দলে দু’টি শাবক-সহ মোট পাঁচটি হাতি ছিল। পরে দলের একটি দাঁতাল হাতি আলাদা হয়ে বিদ্যাসাগর পল্লি এলাকায় চলে আসে। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাজে যাওয়ার সময় হাতির দলের সামনে পড়ে যান অনুপ মল্লিক (৫৪)। দাঁতাল হাতিটি অনুপকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে। তাঁকে উদ্ধার করে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাকি চারটি হাতি নতুন জেলা কালেক্টরেটের পাশে প্রাচীর ঘেরা ঝোপঝাড়ে ঢুকে পড়ে। দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহর লাগোয়া ধরমপুরের শাল জঙ্গলে দাঁতাল হাতিটিকে বন দফতর ঘুমপাড়ানি গুলি করে। তারপর জোয়ালভাঙার জঙ্গলে হাতিটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সকালে শাবক-সহ যে চারটি হাতি নতুন জেলা কালেক্টরেটের পাশে ঝোপ-জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিল তারা সেখান থেকে সরতে চায়নি। হাতি আসার খবর পেয়ে লোকজন ভিড় জমান। জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, ‘‘এত মানুষজন রয়েছেন। যার ফলে হাতিকে সরানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।’’

দিনভর মানুষজন কমেনি, উল্টে বেড়েছে। বিকেলের পর থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। হুলা পার্টির দল হুলা জ্বালিয়ে হাতিকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। তাতে নয়া কালেক্টরেটের পাশের ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নেওয়া চারটি হাতির মধ্যে একটি তাড়া করে হুলা পার্টির লোকজনকে। ওই সময় হাতিকে হুলা ছুডে মারা হয়। কিন্তু তাতে হাতিটির শরীরে লাগেনি। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি হাতির পিঠের জ্বলন্ত হুলার রড গেঁথে যায়। হাতিটি চিৎকার শুরু করে। বাকি তিনটি হাতি সওয়া ৫টা নাগাদ উল্টোদিকে রাজ কলেজের প্রাচীর ভেঙে ভিতরে ঢুকে যায়।

হাতি জখম হওয়ার পর খবর পেয়ে মানুষজনের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ে। রাজ কলেজের গেটের বাইরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারপর রাজ কলেজ চত্বর থেকে হুলাপার্টির লোকজনকে বার করে বেধড়ক মারধর করা হয়। মানুষ প্রশ্ন তুলতে থাকে হাতি তাড়ানোর নামে কেন হাতিকে আক্রমণ করা হবে। হাতি জখম হওয়ার পর কেন চিকিৎসা শুরু হয়নি?

এ নিয়ে ডিএফও উমর ইমামের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। পরে ঘটনাস্থলে এসডিপিওর নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী আসে। সাড়ে ৭টা নাগাদ জখম হাতিটি ঘুমপাড়ানি গুলি করার পর চিকিৎসা শুরু করেন প্রাণী চিকিৎসক চঞ্চল দত্ত। চিকিৎসা চলাকালীন রাজ কলেজ থেকে বেরিয়ে তিনটি হাতি জখম হাতিটির কাছে চলে আসে। তাতে বিপত্তি বাড়ে। রাত প্রায় ১১ টা নাগাদ তিনটি হাতিকে সরানো হয়। পরে হাতিগুলি জঙ্গলের দিকে চলে যায়। শুক্রবার ভোর ৪টে নাগাদ জখম হাতিটিকে জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল। এ দিন দুপুরে হাতিটির মৃত্যু হয়।

আজ, শনিবার হাতিটির ময়নাতদন্ত হবে। জানা গিয়েছে, জ্বলন্ত হুলা পিঠে গেঁথে থাকার ফলে হাতিটির শিরাগুলি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ওই ঘটনার পর বন দফতরের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। হাতিপ্রেমীদের অভিযোগ, কেন বিকেল থেকে হুলা দিয়ে হাতিকে উত্যক্ত করা হল? মানুষজনকে সরিয়ে সন্ধ্যা হলেই হুলাপার্টি দিয়ে হাতিকে জঙ্গলে পাঠানো যেত। অভিযোগ, হাতিকে সরানোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবের জেরেই হাতির মৃত্যু হয়েছে। গ্রামীণ এলাকার মানুষজনের অভিযোগ, গ্রামে তো হাতি প্রায় ঢুকে সব তছনছ করে দেয়, গ্রামে কোনওদিন হাতিকে এ ভাবে মারা হয়নি। শহরের ক্ষেত্রে কেন এ ভাবে হাতিটিকে মারা হল?

ডিএফও উমর ইমাম বলেন, ‘‘দুপুরে জখম হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। হাতিটিকে হুলা দিয়ে আক্রমণ করা একেবারেই উচিত ছিল না। যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে উপযুক্ত শাস্তি পাবে। হুলাপার্টির দল না অন্য কেউ আক্রমণ করেছে হুলা দিয়ে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

ডিএফওর দাবি, ঝাড়গ্রামের উত্তর দিক থেকে ঢুকেছে হাতির দলটি। কিছু গ্রামের লোক আমাদের হুলা টিমকে দু’ঘণ্টা আটকে রেখেছিল। ওই দুই ঘণ্টার মধ্যে শহরে ঢুকে পড়েছিল হাতির দল। এত মানুষজন ছিল যাঁরফলে হাতি সরানোর ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা হয়েছে। বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে ফোন করা হলেও তিনি
তা ধরেননি।

আরও পড়ুন
Advertisement