এই চেয়ারে বসেই কমলা চক্রবর্তীর (বাঁ দিকের ছবি) বানানো চা খেয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। চেয়ারে রাখা সেই কাপও। —নিজস্ব চিত্র।
কাঠের চেয়ারটা একই রকম আছে। ঝাড়পোঁচ হলেও, পালিশ পড়েনি। ঝাড়গ্রামের চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যেরা চেয়ারটির বাড়তি যত্ন করেননি ইচ্ছে করে। কারণ, তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব।
১৯৪০-র ১২ মে এই চেয়ারেই বসেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। চা খেয়েছিলেন। যে কাপে চুমুক দিয়েছিলেন নেতাজি, তা-ও অক্ষত। তবে প্লেটটি ভেঙে গিয়েছে।
১৯৪০-এর ১২ মে নাড়াজোল রাজ পরিবারের কুমার দেবেন্দ্রলাল খানের আয়োজনে ‘স্বরাজের’ ডাক দিয়ে ঝাড়গ্রামের দুর্গা ময়দানে (তৎকালীন লালগড় মাঠ) জনসভা করেছিলেন সুভাষচন্দ্র। অবিভক্ত মেদিনীপুরে সেটিই ছিল তাঁর শেষ জনসভা। সভার পরে, বিকেলে বিশিষ্ট আইনজীবী ভূপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আমন্ত্রণে মাঠ লাগোয়া তাঁর বাড়িতে চায়ের আসরে যোগ দেন সুভাষ। তাঁর জন্য চা বানিয়েছিলেন ভূপেন্দ্রনাথের মেজ বৌমা কমলা চক্রবর্তী।
কমলার মেয়ে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা রুমা চক্রবর্তী বিশ্বাস বলেন, ‘‘মা সুভাষচন্দ্রকে চা খাওয়ানোর স্মৃতিচারণ করতেন। ধুতি-পাঞ্জাবি ও গান্ধী টুপি পরিহিত সুভাষচন্দ্র বাড়ির বৈঠকখানার যে চেয়ারটিতে বসেছিলেন, আর যে পেয়ালায় চা খেয়েছিলেন—ওই দু’টি স্মারক সযত্নে রাখা হয়েছে।’’
রুমা জানান, পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা চা পরিবেশন করেছিলেন। কমলা, তাঁর শাশুড়ি সরলাবালা, বড় জা শান্তিদেবী পর্দার আড়াল থেকে সুভাষচন্দ্রকে প্রণাম করেছিলেন। রুমার খুড়তুতো দাদা ঝাড়গ্রামের আইনজীবী সোমনাথ চক্রবর্তীও বলছেন, ‘‘ঠাকুমা, বাবা, দুই জেঠু ও দুই জেঠিমার কাছে ওই বিশেষ দিনটির অনেক কথা শুনেছি। তাঁরা সকলেই প্রয়াত।’’
বাড়ির লোকেরা জানান, সারা বছর ওই চেয়ার থাকে দোতলায়। শো-কেসে যত্নে রাখে থাকে কাপ। ২৩ জানুয়ারি এলে, চেয়ার এক তলায় নামিয়ে সুভাষচন্দ্রের ছবি বসিয়ে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। আগে মূলত কমলার উদ্যোগেই প্রতি বছর বার্ষিক শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হত। বছর তিনেক আগে তিনি প্রয়াত হওয়ার পরে, সোমনাথ ও রুমার উদ্যোগে সে কাজ হচ্ছে। সোমনাথের ছেলে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক জগন্নাথ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘এই স্মৃতিচিহ্ন আমাদের কাছে অমূল্য।’’