(বাঁ দিকে) অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশন। ১২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বাজেট পেশ করবেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ বারের বাজেট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের শেষ ‘পূর্ণাঙ্গ বাজেট’। তাই এই বাজেটে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা বড় অঙ্কের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) ঘোষণার আশায় রয়েছেন। প্রশাসনিক সূত্রে তাঁরা জেনেছেন, বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই আসন্ন বাজেটে বেশ কিছু নতুন প্রকল্প ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়াও রূপশ্রী, কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পগুলিতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ হতে পারে। তার ভিত্তিতেই সরকারি কর্মচারীরা মনে করছেন, তাঁদের মন পেতে বাজেটে বড় অঙ্কের ডিএ ঘোষণা করতে পারে সরকার।
সরকারি কর্মচারীদের ডিএ সংক্রান্ত বাসনার কথা অজানা নয় মুখ্যমন্ত্রীর। তাই বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে আপাতত ডিএ নিয়ে অঙ্ক কষতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অর্থ দফতরের শীর্ষ আধিকারিকেরা। সম্প্রতি কেন্দ্র অষ্টম পে কমিশন ঘোষণা করার পরে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) মধ্যে পার্থক্য উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধির পথে। তাতেই ডিএ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলনরত রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির ক্ষোভ খানিকটা বেড়েছে বইকি। ভোটের কাজে সরকারি কর্মচারীদের বড় ভূমিকা থাকে। তাই রাজ্য বাজেটে তাঁদের জন্য রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত কিছু ভাবতে হবে বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৫৩% হারে ডিএ পাচ্ছেন। আর পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা পাচ্ছেন ১৪% হারে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতনে এই ‘উল্লেখযোগ্য’ ফারাকের কথা তুলে ধরছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর ওই মন্তব্যের পরে, বিশেষত রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের পাওনা নিয়ে বাড়তি ভাবনা ভাবতে হচ্ছে নবান্নকে। অর্থ দফতরের একটি সূত্রের বক্তব্য, ৪-৬ শতাংশের মধ্যে ডিএ বৃদ্ধি করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে যে পরিমাণ ডিএ-ই দেওয়া হোক, তা বাজেট পেশের একেবারে শেষ মুহূর্তে ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের বাজেট বক্তৃতার শেষ লগ্নে মুখ্যমন্ত্রীর থেকে একটি চিরকুট পেয়ে ৩ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা। আবার ২০২৩ সালে পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের উৎসবের উদ্বোধনে গিয়ে ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা নিজেই।
এমন সব উদাহরণ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ সংক্রান্ত বিষয়ে ‘ভরসা’ জোগাচ্ছে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘নতুন বছরের শুরুতেই আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বকেয়া ডিএ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের যে ৩৯ শতাংশ ডিএ বাকি, এ বারের বাজেটে সেই পরিমাণ ডিএ সরকারি কর্মচারীদের দেওয়ার দাবি করেছি আমরা।’’ বকেয়া ডিএ-র দাবিতে গত দু’বছর ধরে আন্দোলনকারী সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের (সরকারি কর্মচারীদের ৩০টি সংগঠন মিলে গঠিত কমিটি) আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষের আবার বক্তব্য, ‘‘রটনা যে সব সময় ঘটনা হবে, তার কোনও অর্থ নেই। আগে রাজ্য সরকার সরকারি কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিক। তার পরে না হয় এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। তবে গত বছর মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছিলেন, রাজ্যে সাড়ে পাঁচ লক্ষের বেশি সরকারি শূন্য পদ রয়েছে। সেই বিষয়েও সরকার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুক।’’
তৃণমূলপন্থী সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক প্রতাপ নায়েক আবার বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘এটুকু বলতে পারি যে, মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাই তিনি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সব দাবিদাওয়া মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু বিরোধী সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলিকে বলতে চাই, কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের রাজ্য সরকারকে যে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে, তা আদায় করতে তারা আন্দোলনে নামুক। সেই আন্দোলনের ফলে রাজ্যের প্রাপ্ত বকেয়া আদায় হলে তাদের সব দাবি রাজ্য সরকার মেনে নেবে।’’