ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডের হেলে যাওয়া বাড়ি। —ফাইল ছবি।
সম্প্রতি কলকাতা শহরে বাড়ি হেলে পড়ার একাধিক ঘটনা ঘটছে, যা নিয়ে অস্বস্তিতে কলকাতা পুরসভা। বাঘাযতীন, ট্যাংরা, এন্টালি, তপসিয়া এবং ভবানীপুর— এই সব অঞ্চলে বাড়ি হেলে পড়ার প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে। শুধু বাড়ি হেলে পড়াই নয়, এ সব ঘটনার সঙ্গে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগও উঠে আসছে। পুরসভা বলছে, এই বেআইনি নির্মাণই বাড়ি হেলে পড়ার মূল কারণ। আর এই দুই সমস্যার মুখে পড়ে আমজনতার ক্ষোভের নিশানা হচ্ছে কলকাতা পুরসভা। তবে কলকাতা পুরসভার একাংশ মনে করছে, কলকাতায় ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে নিজেদের সচেতনতা বৃদ্ধি না-পেলে বার বার এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ জানিয়েছে, সস্তায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য ক্রেতাদের অসচেতনতা এবং প্রোমোটারদের বেআইনি কার্যকলাপ এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। কিছু অসাধু প্রোমোটার বেআইনি ভাবে নির্মাণ করে অস্বাভাবিক কম দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করছেন। ট্যাংরা এলাকায় সাম্প্রতিক একটি বহুতল হেলে পড়ার ঘটনার তদন্তে প্রকাশ, মাত্র ১০ লক্ষ টাকায় দু’কামরার একটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি নির্মাণ। আবার ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডের বাড়িটির ক্ষেত্রে বাড়ি হেলে পড়ার পর তদন্তে উঠে এসেছে যে, নির্মাণের সময় কোনও সঠিক প্রকৌশলগত নিয়ম মানা হয়নি।
কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, “মানুষ সব সময় সস্তায় ফ্ল্যাট কিনতে চান। সেই সুযোগ নিয়ে বেআইনি আবাসন তৈরি করে বিক্রি করা হয়। পরে বিপত্তি হলে আঙুল ওঠে পুরসভার দিকে।” প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের বেআইনি বাড়ি ভেঙে পড়লে দায় কার? বিল্ডিং বিভাগের মতে, ক্রেতাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কোনও ফ্ল্যাট কেনার আগে সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটের প্ল্যান পুরসভা দ্বারা অনুমোদিত কি না, তা যাচাই করা জরুরি। প্ল্যান অনুমোদিত থাকলেও তা একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে পরীক্ষা করানো উচিত। হেলে পড়া বাড়ি শুধুমাত্র নির্মাণের ত্রুটির ফল নয়, এটি সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর নিরাপত্তার জন্যও বড় বিপদ। এর ফলে বাড়ির আশপাশের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলিরও ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, এ সব বাড়ির নির্মাণে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এবং যথাযথ প্রকৌশলগত মানদণ্ড মানা হয়নি। নির্মাণের ক্ষেত্রে মানা হয়নি ন্যূনতম শর্তও।
কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানিয়েছে, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে পুরসভার পক্ষ থেকে বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করতে অভিযান শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে ক্রেতাদের এই বিষয়ে আরও সচেতন করতে পুরসভা বিভিন্ন প্রচার কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল, তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিল্ডিং বিভাগের মতে, বেআইনি নির্মাণের কারণে যে ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা এড়াতে ফ্ল্যাট কেনার আগে ক্রেতাদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। সঠিক নথি যাচাই এবং অনুমোদিত ফ্ল্যাট কিনলে ভবিষ্যতে এই ধরনের বিপদ এড়ানো সম্ভব। সম্প্রতি মেয়র ফিরহাদ হাকিম সাধারণ মানুষকে ফ্ল্যাট কেনার আগে ভাল করে খোঁজখবর নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু রাতারাতি কলকাতা শহর থেকে বেআইনি নির্মাণের অসুখ দূর করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকদের একাংশ ।