Horse Rider: মোটরবাইক ছেড়ে ঘোড়ায় বাজি ব্যান্ডেলের যুবকের, ঘোড়ার গাড়ি তৈরি করে ব্যবসারও ভাবনা

নিজের মোটরবাইক তুলে রেখেছেন। মোটরবাইক তো অর্থ দেবে না! ঘোড়া দেবে। দিচ্ছেও। তাই ঘোড়ায় বাজি রেখেছেন বছর পঁয়ত্রিশের অলোক রায়।

Advertisement
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 
ব্যান্ডেল শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৩০
ঘোড়ার সঙ্গে অলোক।

ঘোড়ার সঙ্গে অলোক। ছবি: তাপস ঘোষ।

ব্যান্ডেলের পথেঘাটে তিনি যেন এক ‘বীরপুরুষ’!

‘ছুটিয়ে ঘোড়া’ তিনি হাজির হচ্ছেন দোকানে, বাজারে, এখানে-ওখানে। সকালে, বিকেলে বা সন্ধ্যায়।

Advertisement

‘বীরপুরুষ’-এর বেশ না থাক, লোকের চোখে পড়ে গিয়েছেন ব্যান্ডেলের বলাগড় রোডের বাসিন্দা অলোক রায়। বিদেশ ঘুরে বাড়িতেই থিতু হয়েছেন করোনাকালে। ‘হারে রে রে রে রে’ করে হানা দেওয়া এক ভাইরাসের জন্য শহরের অনেক যুবক কাজ খুইয়ে দিশাহারা। অলোক নন। ঘোড়ার পিঠে চড়ে তিনি ঘুরছেন। যাতে অনেকে চড়তে উৎসাহিত হয়। ঘোড়ায় চড়িয়েই জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। শুরু করে দিয়েছেন প্রশিক্ষণ দেওয়া। কয়েকজন শিক্ষার্থীও জুটে গিয়েছে ইতিমধ্যে।

‘মুসকান’ই অলোকের ‘রাঙা ঘোড়া’। ‘রাজু’ও আছে। নিজের মোটরবাইক তুলে রেখেছেন। মোটরবাইক তো অর্থ দেবে না! ঘোড়া দেবে। দিচ্ছেও। তাই ঘোড়ায় বাজি রেখেছেন বছর পঁয়ত্রিশের যুবক।

অলোকের কথায়, ‘‘তেলের দাম আগুন। বাইক চালিয়ে আর কী করব! পরিবেশেরও ক্ষতি হবে। ঘোড়ায় দু’টি সমস্যা থেকেই রেহাই। পেটে দানাপানি দিয়ে দিলে ঘোড়া টানা ৫০ কিলোমিটার দৌড়বে। রোজগারও হবে। তাই ঘোড়ায় চড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে দিয়েছি।’’ ঘোড়ার গাড়ি তৈরি করে ব্যবসা করারও পরিকল্পনা আছে তাঁর। যেমন কলকাতায় হয়।

অলোক জানান, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে আল মুরাদে একটি সংস্থায় তিনি চাকরি করতেন। ‘হেভি ইনস্ট্রুমেন্ট অপারেটর’ (ভারী যন্ত্রাংশ চালক) ছিলেন। সংস্থার মালিক এক শেখ। তাঁর পোষা ঘোড়া আছে। সেই ঘোড়া দেখভালের আয়োজন দেখে অলোক তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন। ঘোড়াগুলি থাকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে। প্রতিটি ঘোড়ার জন্য সারা দিন দু’জন থাকেন। অলোক নিজেও নিয়মিত ঘোড়ায় চাপতেন সেখানে। বছর খানেক আগে অলোকের বাবা-মা দু’জনেই করোনায় সংক্রমিত হন। অলোক ফিরে আসেন। প্রথমে বাইকই চালাচ্ছিলেন। পরে ঘোড়ার কথা মাথায় আসে।

কয়েক মাস আগে জন্মাষ্টমীর দিন কলকাতার হেস্টিংস থেকে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় একটি ঘোড়া কিনে ফেলেন। কাটিয়াওয়ারা প্রজাতির ছেলে ঘোড়াটির নাম দেন ‘রাজু’। কালীপুজোয় সাড়ে তিন লক্ষ টাকায় আরও একটি ঘোড়া কেনেন। এটি মারোয়া প্রজাতির মেয়ে ঘোড়া, ‘মুসকান’।

অলোকের দুই মেয়েও ঘোড়া দু’টির যত্নআত্তি করে। স্ত্রী কলকাতায় চাকরি করেন। তিনিও স্বামীর নতুন উদ্যোগে পাশে রয়েছেন। শহরের পুলিশ অলোকের উদ্যোগের কথা জানে। মফস্‌সল শহরের সঙ্কীর্ণ রাস্তায় এই ‘ঘোড়দৌড়ে’ এখনও কোনও সমস্যা হয়নি বা অভিযোগ আসেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। তারা নজর রাখছে।

নজর পড়েছে সমাজমাধ্যমেরও। ঘুরছে অলোকের ঘোড়সওয়ারির ফুটেজ। তবে, শুধু প্রচার নয়, প্রতিষ্ঠা পাওয়াই আসল উদ্দেশ্য, জানাচ্ছেন যুবক। তিনিও বলতে চান, ভাগ্যিস, রাজু-মুসকান সঙ্গে ছিল।

Advertisement
আরও পড়ুন