Mamata Banerjee

কেন্দ্র রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে বাংলাদেশে শান্তিসেনা পাঠানোর আর্জি জানাক: বিধানসভায় মমতা

মমতা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিদেশমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন। শান্তিসেনা পাঠানোর বিষয়ে তাঁর প্রস্তাব লিখিত আকারে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৩৯
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আরও এক বার দল এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, সোমবার দুপুরে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি বাংলাদেশে শান্তিসেনা (পিস কিপিং ফোর্স) পাঠানোর জন্য কেন্দ্রকে রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে কথা বলার আর্জি জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রস্তাব, কেন্দ্র রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে বাংলাদেশে শান্তিসেনা পাঠানোর আর্জি জানাক।”

Advertisement

একই সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিংবা বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বিবৃতি দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিন প্রধানমন্ত্রী। যদি তাঁর কোনও অসুবিধা থাকে, তবে বিদেশমন্ত্রী বিবৃতি দিন।” বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আরও এক বার দল এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি জানান, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার রাজ্য সরকারের নেই। তাই তাঁরা কেন্দ্রের পরামর্শ মেনে চলবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশে ভারতীয়রা আক্রান্ত হলে তাঁর সরকার তা সহ্য করবে না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “যদি বাংলাদেশে ভারতীয়রা আক্রান্ত হন, তবে আমরা তা সহ্য করব না। আমরা তাঁদের সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে পারি।”এই প্রসঙ্গেই তাঁর সংযোজন, “আমাদের পরিবার, সম্পত্তি এবং প্রিয় মানুষেরা বাংলাদেশে আছেন। ভারত সরকার এই বিষয়ে (বাংলাদেশ) যে অবস্থান নেবে, আমরা তা গ্রহণ করব। কিন্তু বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে ধর্মীয় কারণে কেউ অত্যাচারিত হলে আমরা তার নিন্দা জানাই। আমরা এই বিষয়ে ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশ নিয়ে কেন্দ্র চুপ করে রয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে বিজেপিকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “আমি গত ১০ দিন ধরে দেখছি কেন্দ্রীয় সরকার চুপ করে রয়েছে। অথচ তাদের দল বলছে সব আটকে দেব। কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের কোনও এক্তিয়ার নেই।” মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় জানান, ওয়াকফ বিল নিয়ে বিধানসভায় আলোচনার পর যে লিখিত প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে যাবে, তার সঙ্গে থাকবে তাঁর শান্তিসেনা সংক্রান্ত প্রস্তাবও।

বৃহস্পতিবারও বিধানসভার অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মমতা জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ নিয়ে দেশের সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তিনি তার সঙ্গে আছেন। বুধবার সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রায় একই কথা বলেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, বাংলাদেশের ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত অগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে। গত সোমবার সংখ্যালঘু নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি নিয়ে উত্তাল হয় গোটা বাংলাদেশ। জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়। হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজোড়া অশান্তির আবহে বেশ কিছু ধর্মীয় সংগঠন মিলে তৈরি করে সনাতনী জাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের মুখপাত্র নির্বাচিত হয়েছিলেন চিন্ময়। তাঁরই ডাকে ঢাকার শহিদ মিনার, চট্টগ্রাম ইত্যাদি নানা এলাকায় সমাবেশে যোগ দেন হাজার হাজার সংখ্যালঘু। চট্টগ্রামে সমাবেশের পর তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করেছিলেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। ওই মামলাতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পর বাংলাদেশে ইসকনের তরফে বিক্ষোভ শুরু হয়, যার নেতৃত্ব দেন চিন্ময়কৃষ্ণের অনুরাগীরাই। চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ পথে নেমেছেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের হাই কোর্টে আবেদন জানানো হয়, ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হোক। জরুরি অবস্থা জারি করা হোক চট্টগ্রাম এবং রংপুরে। মঙ্গলবার চিন্ময়কৃষ্ণকে আদালত থেকে বার করার সময় আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী এবং আইনজীবীদের সঙ্গে তাঁর অনুগামীদের সংঘর্ষ বাধে। ঘটনায় এক আইনজীবীও নিহত হন।

Advertisement
আরও পড়ুন